রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। — ফাইল চিত্র
তাঁর দলবদল নিয়ে জল্পনার মধ্যেই মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে গরহাজির রইলেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, বৈঠকে আরও তিন মন্ত্রী ছিলেন না। তাঁরা হলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। তবে এঁদের কাউকে নিয়ে এখনও রাজ্য রাজনীতিতে কোনও জল্পনা ছড়ায়নি। এঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ এবং চন্দ্রনাথ তাঁদের অনুপস্থিতির কারণ আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন। তবে গৌতমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ফোন সুইচ্ড অফ ছিল। মেসেজেরও জবাব আসেনি।
যোগাযোগ করা যায়নি রাজীবের সঙ্গেও। তবে তাঁর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই দু’দফায় তাঁদের আলোচনা হয়েছে। তবে কোনও রফাসূত্র মেলেনি। এর মধ্যেই রাজীব মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে না যাওয়ায় তাঁর দলত্যাগের জল্পনা আরও জোরাল হয়েছে। প্রসঙ্গত, সোমবার আনন্দবাজার ডিজিটালে লেখা হয়েছিল, রাজীবকে দলে রাখতে তৃণমূল ‘মরিয়া’। তবে মঙ্গলবার দলের শীর্ষনেতৃত্বের তরফে অন্যরকম সঙ্কেতই মিলেছে। দলের এক প্রথমসারির নেতা জানিয়েছেন, তাঁরা মনে করছেন রাজীব দল ছাড়ার বিষয়ে মনস্থির করেই ফেলেছেন। কিন্তু তবুও দলের তরফে আলোচনা করা হচ্ছে। যাতে এটা না বলা যায় যে, রাজীব তাঁর অসন্তুষ্টি বা ক্ষোভের কথা বলার অন্দরে বলার কোনও সুযোগই পাননি। দলের এক সাংসদের কথায়, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর মতো রাজীবও বহুদিন ধরেই বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। আমরা সে সব খবরই জানি। কিন্তু আমরা ওর সঙ্গে শেষপর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী। যাতে কোনওরকম ভাবে পরে কেউ বলতে না পারেন যে, দল রাজীবকে রাখার কোনও চেষ্টা করেনি।’’ অর্থাৎ, আলোচনা চালিয়ে গেলেও রাজীব সম্পর্কে ভিতরে ভিতরে কঠোর অবস্থানই নিচ্ছে তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, সদ্য দলত্যাগ করলেও প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু তার অনেক আগে থেকেই রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক এড়িয়ে যাওয়া শুরু করেছিলেন। শেষ পাঁচ মাস মন্ত্রিসভার কোনও বৈঠকে তাঁকে দেখা যায়নি। বস্তুত, রাজীবও গত তিন মাস মন্ত্রিসভার কোনও বৈঠকে অংশ নেননি। সোমবার পার্থর নাকতলার বাসভবনে রাজীব আলোচনায় বসেছিলেন। রাজীবের ক্ষোভ প্রশমন করা যায়নি বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর।
আরও খবর: প্রাথমিকে নিয়োগ হবে ১৬ হাজার ৫০০ শিক্ষক, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা
মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ না দিলেও বুধবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভবনের চত্বরে ফুলমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বনমন্ত্রী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজীবকে। আমন্ত্রণপত্রে নাম রয়েছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থেরও। অর্থাৎ, গত সোমবারের বৈঠকের পর ওইদিন ফের মুখোমুখি হতে পারেন তাঁরা। এখন দেখার, রাজীব ওই অনুষ্ঠানে যান কি না। গেলেও অনুষ্ঠানের ফাঁকে পার্থের সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হয় কি না।
আরও খবর: এ বার পরিবর্তনের পরিবর্তন চাই, দলবদলের পর প্রথম সভা থেকেই ডাক শুভেন্দুর
রাজীব মঙ্গলবার ফোন ধরেননি। মন্ত্রী গৌতমের ফোনও ছিল সুইচ্ড অফ। জানা গিয়েছে, তিনি তাঁর বিধানসভা এলাকা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে দিনভর ‘বঙ্গধ্বনি’ কর্মসূচি করেছেন। অনুপস্থিতি মন্ত্রীদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘আমি এসএমএস করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কাছে ছুটি চেয়েছিলাম। কারণ, আজ আমার বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি ছিল। আর বুধবার সকালে তুফানগঞ্জ কলেজের ৫০ বছরের অনুষ্ঠান। এই দু’টি কারণ মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে এসএমএস করে ছুটি চেয়েছিলাম। তিনি ছুটি মঞ্জুর করায় আমি মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাইনি।’’
সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ২৮-২৯ তারিখে বোলপুরে যাবেন তিনি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে গরহাজির মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সেই সফরের প্রস্তুতিতেই ব্যস্ত বলে জানিয়েছেন। বোলপুরের দু’বারের বিধায়কের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আর কয়েকদিন পরেই আমার বিধানসভা এলাকায় আসবেন। সেই কারণে অনেক কাজ আছে। সকালে একবার ভেবেছিলাম ক্যাবিনেট বৈঠকে যাব। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতি নিয়ে কাজের জন্য আর যাওয়া হয়নি।’’