পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
টানা তিন দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বেহালা পশ্চিমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিধায়ক কার্যালয়। পার্থ রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, তৃণমূলের মহাসচিব। তথা বেহালা পশ্চিমের পুরনো বিধায়ক। বিধায়কের থেকে প্রাপ্য পরিষেবার জন্য তাঁর কেন্দ্রের ভোটাররা ওই দফতরে আসেন। গত কয়েক দিন ধরে সেটি টানা বন্ধ। কবে খুলবে, তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। বলতে পারছেন না, কবে পরিষেবা পাবেন এলাকার মানুষ।
শুক্রবার সকালে শিল্পমন্ত্রীর নাকতলার বাড়িতে যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার পর দীর্ঘ ২৭ ঘণ্টা জেরার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার সকালে বেহালা পশ্চিমে পার্থের বিধায়ক কার্যালয় খোলা হয়েছিল। কিন্তু দুপুরের দিকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে আর কার্যালয়ের তালা খোলা হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই দুশ্চিন্তা বেড়েছে বেহালা পশ্চিমের বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বিধায়কের থেকে পরিষেবা পেতে বেহালা ম্যান্টনের ওই কার্যালয়ে আসেন ওই এলাকার মানুষ। কিন্তু গত তিন দিন ধরে বিধায়ক কার্যালয় আশপাশে দেখা যায়নি সেখানে কর্মরত কর্মীদের। ২০০১ সালে সিপিএমের দাপুটে নেতা তথা ১০ বছরের বিধায়ক নির্মল মুখোপাধ্যায়কে হারিয়ে প্রথম বারের জন্য বিধায়ক হন পার্থ। তারপরেই ডায়মন্ড হারবার রোড সংলগ্ন বেহালা ম্যান্টনের এই কার্যালয়টি ভাড়া নিয়ে বিধায়ক অফিস শুরু করেন তিনি।
নিজের এই বিধায়ক অফিসটি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ‘পয়া’ (লাকি) বলেই ঘনিষ্ঠমহলে উল্লেখ করতেন পার্থ। কারণ, বেসরকারি সংস্থার শীর্ষপদের চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে প্রথম বার বিধায়ক হওয়ার পর এই কার্যালয়ে বসেই উত্থান হয়েছিল তাঁর। ২০০৬ সালে বামফ্রন্টের ২৩৫ আসনে জয়ের মধ্যেও পার্থ জয়ী হয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হন। পরে রাজ্যের শিল্প, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিষদীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।
কিন্তু এখন সেই বিধায়ক কার্যালয়ে ঝুলছে বড়সড় তালা। দিন কয়েক আগে পর্যন্ত ‘পার্থদাকে’ ঘিরে সকাল থেকে রাত অবধি কর্মী-সমর্থকদের যে ভিড় থাকত কার্যালয়ের ভিতরে-বাইরে, তা-ও নেই। নেতা-কর্মীদের বাইক এবং গাড়ির যাতায়াতও নেই। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন বিধায়ক কার্যালয়ের সামনে ডায়মন্ড হারবার রোড সংলগ্ন রাস্তায় একটি অস্থায়ী বসার জায়গাও তৈরি করা হয়েছিল। ২০২১ সালে পঞ্চম বার জিতে আসার পর সেই অস্থায়ী বসার জায়গাটিকে স্থায়ী রূপ দেওয়া হয়। যেখানে পার্থ একাই বসতেন। সেখানেও ঝুলছে তালা।
প্রথম দিকে এই কার্যালয়টি সাদামাঠা থাকলেও পার্থের রাজনৈতিক প্রভাব ও গুরুত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দফথরের চেহারা পাল্টেছে। এক সময় মাত্র কয়েক জন কর্মী নিয়ে শুরু করা কার্যালয়ে পরে জনাদশেক কর্মী নিয়োগ করেছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব । কিন্তু এখন সেই কর্মীরাও অফিসের ধারেকাছে নেই।
এই কার্যালয়ে বসেই মন্ত্রী হিসেবে বহু গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে সই করেছেন পার্থ। দলীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সাংবাদিক বৈঠকও অনেক সময় এই কার্যালয়ে বসেই করতেন পার্থ। নাকতলার বাসিন্দা হলেও বেহালা ম্যান্টনের এই কার্যালয়টি হয়ে উঠেছিল পার্থর ‘পাওয়ার হাউস’। সেই বিধায়ক কার্যালয় এখন শুনশান। কার্যালয়টিতে নিয়মিত যাতায়াত করা বেহালা পশ্চিমের এক নেতার কথায়, ‘‘বিধায়ক কার্যালয় সামলানো নিয়ে দলের তরফে এখনও কোনও বার্তা আসেনি। তাই কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। এখন বেহালা পশ্চিমের নেতা-কর্মীদেরও মন ভাল নেই।’’