খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
রাজ্য সরকারের খাদ্য প্রকল্পের কতটা পৌঁছেছে সাধারণ মানুষের কাছে? জঙ্গলমহলের ভোটের বিশ্লেষণে বসে এই তথ্য যাচাই করতে চলেছে খাদ্য দফতর। এ মাসের শেষে জঙ্গলমহলের চার জেলায় সেই কাজ করবেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। টানা তিন দিন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বসে ‘গণবন্টন ব্যবস্থা’র হাল দেখবেন তিনি।
জঙ্গলমহলে ভোটের ফল বিশ্লেষণে নিজেদের একাধিক খামতি চিহ্নিত করেছেন শাসক শিবিরের নেতারা। সাংগঠনিক স্তরে দলের কাজকর্মের মতোই প্রশাসনিক স্তরেও বেশ কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। সেই খামতি দূর করতে দলের মতো মাঠে নামছে সরকারি দফতরগুলিও। জঙ্গলমহলের জন্য রাজ্য সরকারের খাদ্য প্রকল্প নিয়েও নানা অভিযোগ সামনে এসেছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তা নিয়ে ক্ষোভের আঁচ পেয়ে প্রতিটি বিষয়ে করণীয় ঠিক করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক, খামতি যদি থাকে, যে স্তরেই থাকুক, তা দূর করতে হবে। এ ব্যাপারে সব স্তরের মানুষের কথা শুনতে হবে।’’ সেই সূত্রেই দলের মতো এইরকম পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য প্রশাসনও।
খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে জঙ্গলমহলের জন্য বিশেষ ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছিল তৃণমূল সরকার। অন্যত্র নির্দিষ্ট আর্থিক সীমার মধ্যে থাকা মানুষ দু’টাকা কেজি চাল পেয়েছেন। এখানে সকলকেই সেই সুবিধার আওতায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তৃণমূল সরকারের অন্যতম পরিচিতি সেই খাদ্য প্রকল্প কি আদৌ পেয়েছেন জঙ্গলমহলের মানুষ? আর যারা সেই চাল পেয়েছেন, তার মান কী রকম ছিল, তা জানতেই সামগ্রিক পর্যালোচনা করবে খাদ্য দফতর। খাদ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেন, ‘‘সামগ্রিক পর্যালোচনা হবে। খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা আছে, তা দেখে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। তা ছাড়া ধান সংগ্রহের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতেই জেলা স্তরে আলোচনা করব।’’
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এখানকার মানুষের জন্য নতুন কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক সময় মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয়দের আর্থিক ও সামাজিক পুনর্বাসন সহ এই প্রকল্পগুলির বিনিয়মে প্রাথমিক ভাবে কিছু রাজনৈতিক লাভও পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে সেই ধারা অনেকটাই বদল হয়েছে। জেলা পরিষদ পেলেও পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে তৃণমূলকে যথেষ্টই বেগ দিয়েছে বিরোধীরা। একই ইঙ্গিত ধরা পড়েছে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশেও। তৃণমূল স্তরে গণবন্টন ব্যবস্থার হালও এ বার খতিয়ে দেখতে চাইছে সরকার।