বন্যায় বিপর্যস্ত কেরল। ছবি: রয়টার্স
একটানা বৃষ্টিতে ঘরের মধ্যে এক হাঁটু জল। রাস্তায় বেরোনোই যাচ্ছে না, কাজ করতে যাওয়া তো দূরের কথা। এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কেরলে। আর তাতেই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে মুর্শিদাবাদের ঘরে ঘরে।
প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরের রাজ্যে বন্যার জন্য মুর্শিদাবাদে উদ্বেগ কেন? কারণ এই জেলার হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক কর্মসংস্থানের জন্য থাকেন সেখানে। বন্যা পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছেন তাঁদের অনেকেই, কেউ কেউ পরিস্থিতি বুঝে রওনা দিয়েছেন বাড়ির পথে। পরিযায়ী শ্রমিকদের দাবি, একে করোনার কারণে হাজারো সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁদের, তার পরে বৃষ্টিতে কাজ হারিয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেক পরিযায়ী শ্রমিক। অনেকেই দিন প্রতি রোজ পান। বৃষ্টিতে টানা কাজ বন্ধ থাকায় রোজগারও তাই শূন্য।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার থেকে আরও বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে সেখানে। এক পরিযায়ী শ্রমিক শফিকুল ইসলাম বলছেন, ‘‘আমরা যে এলাকায় রয়েছি, সেখানে এখন পথে নৌকা চলছে, দোকানপাট ডুবে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে গাড়ি-ঘোড়া চলাচল বন্ধ। দোতলা ঘরের ছাদে গৃহবন্দি হয়ে দিন কাটছে আমাদের। যেটুকু সঞ্চয় আছে তা দিয়ে কত দিন চলবে বুঝতে পারছি না।’’ উজ্জ্বল মণ্ডল বলেন, ‘‘এমন অবস্থা, আমরা একে অপরের পাশে গিয়েও দাঁড়াতে পারছি না। যতটা সম্ভব চেষ্টা করে চলেছি।’’
বছর দুয়েক আগেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কেরলে। সে সময়েও গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হয়েছিল হাজার হাজার শ্রমিককে। খাওয়া-দাওয়া থেকে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল কেরল জুড়ে। এ বছর এর্নাকুলামে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দিন কয়েক থেকে। তাতেই দু’বছর আগের সেই ভয় আবার তাড়া করছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। তাঁরা তাই আর কেরলে না থেকে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু পকেট ফাঁকা। অনেকে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেও পারছেন না। ঘর থেকে বেরোনোই তো সম্ভব হচ্ছে না।
বাড়িতেও তাই উদ্বেগ বাড়ছে। রানিনগরের বৃদ্ধা জমেলা বেওয়া বলছেন, ‘‘একে করোনা পরিস্থিতিতে নাজেহাল হয়েছে ছেলেটা। দুধেল গরু বিক্রি করে কেরলে গিয়েছিল, সবে কাজকর্ম শুরু করছিল, আবার বন্যার কবলে পড়তে হল ওকে। একমাত্র ছেলের উপরে নির্ভর করে চলে আমাদের পাঁচ জনের পেট। কেমন করে দিন চলবে বুঝে উঠতে পারছি না।’’