হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে। শনিবার সকালে দাসপুর থানার জোতঘনশ্যাম সংলগ্ন শ্যামগঞ্জের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় ভারতী দাস (৩০) নামে ওই মহিলার দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, ভারতীদেবীকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। মৃতদেহটি যে অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে, তা দেখে পুলিশের অনুমান, খুনের আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও অনুমান পুলিশের। নিহতের মা লক্ষ্মীবালা দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে আপাতত খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “ওই ঘটনায় খুনের মামলার শুরু হয়েছে। তদন্ত চলছে।” ধর্ষণ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীদেবীর স্বামী প্রদীপ দাস মুম্বইয়ে সোনার কাজ করেন। দুই ছেলে সাগর এবং কৃষ্ণপদকে নিয়ে শ্যামগঞ্জের বাড়িতে থাকতেন ভারতীদেবী। শ্বশুরবাড়ি থেকে কিছুটা দূরে পাকা বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। ভারতীদেবী ব্লাউজ তৈরির কাজ করতেন। তাঁর হাত-পা ব্লাউজের কাপড় দিয়েই বাঁধা ছিল।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাতে। ভারতীদেবী ও তাঁর দুই ছেলে আলাদা ঘরে শুয়ে ছিলেন। শনিবার ভোর চারটে নাগাদ ভারতীদেবীর বড় ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাগর প্রথম মাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। ওই দৃশ্য দেখে চিৎকার করে ওঠে সে। তবে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে তার গলা প্রথমে কেউ শুনতে পারেনি। পরে ঘটনার কথা জানাজানি হলে প্রতিবেশীরা চলে আসেন। শ্যামগঞ্জ সংলগ্ন কবিচক গ্রামে ভারতীদেবীর বাপের বাড়ি থেকেও লোকজন চলে আসেন। ইতিমধ্যে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দা দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আশিস হুতাইত। সকাল সাতটা নাগাদ দাসপুর থানার ওসি শ্যামল দাস বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, একাধিক দুষ্কৃতী ঘটনায় জড়িত। তারা বাড়ির সদর দরজার তালা খুলেই ঢুকেছিল। কারণ, তালা ভাঙা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, রাতে খাটেই ঘুমোচ্ছিলেন ভারতীদেবী। দুষ্কৃতীরা তাঁকে খাট থেকে ঘরের মেঝেতে নামিয়ে খুন করেছে। কিন্তু কী উদ্দেশ্য ছিল দুষ্কৃতীদের? দুষ্কৃতীরা ঘরে রাখা ট্রাঙ্ক খুলেছিল। ভারতীদেবীর মোবাইল, কানের দল এবং ট্রাঙ্ক থেকে কিছু টাকা খোওয়া গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুধু চুরির উদ্দেশ্যেই দুষ্কৃতীরা এসেছিল না ধর্ষণ বা অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল তাদের, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ভারতীদেবীর স্বামী প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত দশটা পযর্ন্ত স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। এ দিন ভোরে তিনি ঘটনার কথা জানতে পারেন। প্রদীপবাবুর আত্মীয়া রানি দাস বলেন, “আমরা খবর পেয়ে দেখি, ভারতীর নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। পরনের শাড়ি অসংলগ্ন। আমাদের ধারনা, খুনের আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল।” গোটা ঘটনায় গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রেবা দাস, সুচিত্রা দাসেরা বলেন, “এই গ্রামে বেশিরভাগ বাড়ির পুরুষরাই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। আমরা ভয়ে রয়েছি।”