সমবায়ে হার তৃণমূলের, হারলেন কাউন্সিলরও

চারিদিকে তৃণমূলের রমরমা। তারই মধ্যে ঘাটাল শহরের চাউলি-সিংহপুর সমবায় সমিতি ফের দখলে রাখল সিপিএম। ২০০৯ সালের পরে রবিবার ফের ভোট ছিল এই সমবায়ে। ৫৪টি আসনের মধ্যে সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন ৩০টিতে, তৃণমূল সমর্থিতরা পেয়েছেন ২৪টি আসন। সমবায় ভোটে হেরে গিয়েছেন সাত নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শেফালি আদকও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১৯
Share:

চারিদিকে তৃণমূলের রমরমা। তারই মধ্যে ঘাটাল শহরের চাউলি-সিংহপুর সমবায় সমিতি ফের দখলে রাখল সিপিএম। ২০০৯ সালের পরে রবিবার ফের ভোট ছিল এই সমবায়ে। ৫৪টি আসনের মধ্যে সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন ৩০টিতে, তৃণমূল সমর্থিতরা পেয়েছেন ২৪টি আসন। সমবায় ভোটে হেরে গিয়েছেন সাত নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শেফালি আদকও।

Advertisement

জেলা পরিষদ থেকে পঞ্চায়েত-পুরসভা, এমনকী স্কুল-কলেজ-সমবায়ের পরিচালন সমিতি পশ্চিম মেদিনীপুরের সর্বত্র এখন তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্য। ঘাটাল পুরসভা রয়েছে শাসকদলের দখলে। পুরসভার ১৭টির মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডই রয়েছে তৃণমূলের দখলে। গত লোকসভা নির্বাচনে তো ১৭টি ওয়ার্ডেই আড়াইশো থেকে তিনশো ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তার পরেও এই সমবায়ে শাসকদলের হার নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। সিপিএমের দাবি, শাসকের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেই মানুষ রায় দিয়েছেন। দলের ঘাটাল জোনাল কমিটির সম্পাদক উত্তম মণ্ডলের কথায়, “আমাদের প্রার্থীদের মারধর করা হয়েছিল। বাড়িছাড়া করার ফতোয়াও দিয়েছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। হুমকির মুখে পড়েছিলেন ভোটাররা। কিন্তু তা উপেক্ষা করে মানুষ ফের আমাদের বেছে নেওয়ায় ভাল লাগছে।” উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে ঘাটালের এই সমবায় সিপিএমের দখলে রয়েছে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, মূলত গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই হার হয়েছে তাদের। তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সভাপতি অজিত দে এবং বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের ঘনিষ্ঠ দলের শহর সভাপতি অরুণ মণ্ডলের অনুগামীদের মধ্যে বিরোধ সকলেরই জানা। তবে প্রকাশ্যে তা মানতে চাইছেন না কেউই। এ প্রসঙ্গে অরুণবাবুর বক্তব্য, “কোন্দল বলে দলে কিছ ু নেই। আসলে ওই সমবায়ে নতুন করে কোনও সদস্য সিপিএম ক্ষমতায় থাকাকালীন করেনি। যাঁরা সদস্য রয়েছেন তাঁরা সমবায় থেকে সুবিধা পাওয়ায় সিপিএমকে ভোট দিয়েছেন। আমাদের হেরে যাওয়ার এটিই প্রধান কারণ।”

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সমবায় সমিতির নির্বাচন ঘিরে প্রথম থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে চাপানউতোর চলছিল। সিপিএমের অবস্থা যখন একেবারেই কোণঠাসা, তখনও সমবায়ের ৫৪টিই আসনেই সিপিএম সমর্থিত প্রার্থী দাঁড়ানোয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ, প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের জন্য তৃণমূলের লোকজন হুমিক দিচ্ছিল। এমনকী ভোটারদের প্রভাবিত করারও অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের দাবি, রবিবার ভোট শুরু হতেই শাসকদলের লোকজন বুথে বুথে গিয়ে পুলিশের সামনেই তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। বহু ভোটারের বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়। তবে ভোট কেন্দ্রে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। ফলে, উত্তেজনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অশান্তি হয়নি।

ঘাটাল পুরসভার ৬, ৭ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা নিয়েই চাউলি-সিংহপুর সমবায় সমিতি। এর মধ্যে ৮ নম্বর বাদে বাকি দু’টি ওয়ার্ডই রয়েছে তৃণমূলের দখলে। ৮ নম্বর ওয়ার্ড আছে সিপিএমের দখলে। অর্থাৎ ভোটে তৃণমূলেরই পাল্লা ভারী থাকার কথা। ভোটের দিনেও বুথে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও সমবায় ভোটে হেরে যাওয়ায় তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নেতার কথায়, “মানুষকে মাংস-ভাত খাইয়ে ভোট দেওয়ানোর বন্দোবস্ত হয়েছিল। তারপরেও হেরে যাওয়ায়, বিশেষ করে এক কাউন্সিলর হেরে যাওয়ায় অস্বস্তি বেড়েছে।” নিজের হার নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি তৃণমূল কাউন্সিলর শেফালিদেবী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement