পর্যটকদের সতর্ক করতে পুলিশের প্রচার। শুক্রবার নিউদিঘায়। ছবি: সোহম গুহ
হুদহুদ আছড়ে পড়ার আগে রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় জারী করা হল সতর্কবার্তা। দিঘা উপকূলেও শুক্রবার সকাল থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হয়। চলে সমুদ্রে নজরদারি। এ দিন সকালে বঙ্গোপসাগরে হুদহুদের অবস্থান ছিল বিশাখাপত্তনমের ৫৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ পূর্বে ও গোপালপুরের ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে। তবে কাঁথিতে বঙ্গোপসাগর উপকূলে শুক্রবার সকাল থেকেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। ঝোড়ো হাওয়া-সহ মাঝারি বৃষ্টিও হয়। সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা অন্য দিনের তুলনায় বেশি থাকায় দিঘা শহরের উপকূলবর্তী কয়েকটি অঞ্চলে জলও জমে যায়।
সমুদ্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য শুক্রবার সকাল থেকেই পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকের মাধ্যমে প্রচার চালানো হয়। সমুদ্রে স্পিড বোর্ডের মাধ্যমেও নজরদারি চলছে। দিঘা থানার ওসি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ দিন সকালে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কয়েকজন পযর্টক সমুদ্রে নামেন। স্নান করার সময় চার জন পর্যটক সমস্যায় পড়লে পুলিশ ও নুলিয়া মিলে তাঁদের উদ্ধার করেন। সটিলাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও হাইস্কুলের শিক্ষক নন্দগোপাল পাত্র জানান, শনিবার ও রবিবার দুপুরের মধ্যে হুদহুদ শক্তি সঞ্চয় করে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে আঘাত আনতে পারে বলে ইতিমধ্যেই আবহাওয়া দফতর থেকে পূবার্ভাস দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারও উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্তবার্তা জারি করেছে। কিন্তু তার আগে শুক্রবার সকালেই কাঁথি উপকূলের আবহাওয়া হওয়ায় উপকূলের নীচু এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। তবে শুক্রবারও দিঘায় পযর্টকদের ভালই ভিড় ছিল। দিঘা হোটেল ওনার্স ও ওয়েলফেয়ার অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি হিমাংশু প্রধান বলেন, “হেটেলে ঘরের চাহিদা ভালই রয়েছে। সামুদ্রিক জলোচ্ছাস দেখতে আসার জন্যও অনেকে যোগাযোগ করছেন।”
দিঘা, শঙ্করপুর পেটুয়াঘাট মত্স্য বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া অধিকাংশ ট্রলার-সহ মস্যজীবীরা শুক্রবার সকালের মধ্যেই মস্যবন্দরগুলিতে ফিরে এসেছে বলে পেটুয়াঘাট ও শঙ্করপুর মত্স্যবন্দরের আধিকারিক প্রদ্যোত্ পাহাড়ি জানিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাঁথির এসডিপিও ইন্দ্রজিত্ বসু শুক্রবার পেটুয়াঘাট ও শঙ্করপুর মত্স্যবন্দরে গিয়ে বন্দর আধিকারিক ও উপকূল থানার পুলিশ কর্মীদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। অন্য দিকে, রামনগর-১ ব্লকের বিডিও তমোজিত্ চক্রবর্তীও শুক্রবার দিঘা মোহনা-সহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। তমোজিতবাবু জানান, শুক্রবার সকালে ঝোড়ো বাতাস-সহ বৃষ্টিতে সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে প্রচার চলছে। প্রশাসন প্রস্তুত।
প্রয়োজনে যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের নিয়ে উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিন খেজুরি-২ বিডিও অরীন্দ্রজিত্ দেবশর্মা ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন। বিডিও অরীন্দ্রজিতবাবু জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখার পাশাপাশি ব্লকের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সামগ্রীও মজুত রাখা রামনগর-২ ও কাঁথি-১ ব্লকেও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শুক্রবার বিকেলের মধ্যে সমুদ্রে মত্স্য শিকারে যাওয়া ট্রলারগুলিকে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। উপকূলবর্তী কাঁথি-১ ও ২, রামনগর-১ ও ২, খেজুরি-১ও ২ ব্লকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার চলছে।” তিনি জানান, আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা চালু থাকবে। এই কাজে স্বেচ্ছাসেবক ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীদের কাজে লাগানো হচ্ছে।