কংগ্রেস ও সিপিএমের সঙ্গে পুলিশের আঁতাতের অভিযোগ তুলে এ বার জেলার নির্বাচনী আধিকারিক জেলাশাসককে অভিযোগ জমা দিল তৃণমূল। সোমবার সবং বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের চেয়ারম্যান অমূল্য মাইতির দেওয়া সেই অভিযোগপত্র গৃহীত হয়েছে। অমূল্যবাবুর অভিযোগ, বেছে বেছে তৃণমূল কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। সিপিএমের কাছে মজুত অস্ত্র উদ্ধারেও পুলিশ সচেষ্ট হচ্ছে না বলে তাঁর অভিযোগ।
অভিযোগ পেয়ে জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “অভিযোগ হাতে পেয়েছি। তদন্ত করা হবে।” আর পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে খড়্গপুরের এসডিপিও অজিত সিংহ যাদব বলেন, “অস্ত্রের সঠিক ঠিকানা দিলে আমরা নিশ্চয়ই উদ্ধার করব। তদন্তের জন্য প্রস্তুত আছি।”
সবং বরাবর কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এই ব্লকে ভাল ফল করেছে কংগ্রেস। বামেরাও নেহাত খারাপ ফল করেনি। সবং বিধানসভা পড়ে ঘাটাল লোকসভার মধ্যে। সেখানে আবার এ বারের কংগ্রেস প্রার্থী সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচন শাসকদল তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের মত।
ইতিমধ্যে গত ১ এপ্রিল পুলিশের একটি ‘সুয়োমটো’ মামলায় গ্রেফতার হন দুই তৃণমূল কর্মী। তার আগের দিন অনুমতি ছাড়া মিছিল করে কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার কর্মিসভা পণ্ড করা হয়েছিল বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। মানসবাবুর বিরুদ্ধেও মোটরবাইক মিছিলের পাল্টা অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। তবে তাতে কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় জেলাশাসকের কাছে মানসবাবুর নামে আগেই অভিযোগ করেছিল তৃণমূল। এ বার একধাপ এগিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলগুলির সঙ্গে পুলিশ ‘গভীর সম্পর্ক’ রাখছে বলে অভিযোগ করলেন তিনি। চিঠিতে অমূল্যবাবু জানিয়েছেন, ‘পুলিশ বেছে বেছে তৃণমূল কর্মীদের হয়রান করছে। ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বেশি করে টহল দিচ্ছে। নাকা করে তৃণমূল কর্মীদের গাড়ি ধরপাকড় করছে। তৃণমূল কর্মীদের মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার করছে। অথচ সিপিএমের কাছে থাকা অস্ত্র উদ্ধার করছে না।” এই পরিস্থিতিতে অমূল্যবাবু সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে।
কিন্তু নিজেদের সরকারের পুলিশের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষহীনতার অভিযোগ কেন? সদুত্তর এড়িয়ে অমূল্যবাবু বলেন, “সিপিএম ও কংগ্রেসের সম্পর্ক বহুদিনের। কেশপুর, গড়বেতা থেকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে মানস ভুঁইয়ার প্রশ্রয়ে সিপিএম হার্মাদরা ঘাঁটি গেড়েছিল সবংয়ে। সেই থেকে সিপিএম কর্মীদের কাছে অস্ত্র রয়েছে। সেগুলি উদ্ধার হচ্ছে না। ফলে এই ভোটে সন্ত্রাসের আশঙ্কা থাকছে।”
এ প্রসঙ্গে এ দিন কংগ্রেসের সবং ব্লক সভাপতি অমল পণ্ডার বক্তব্য, “জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের বদলি প্রমাণ করছে অমূল্য মাইতির অভিযোগ সত্যি কি না। আর ২০০১ সালে কেশপুর, গড়বেতার তৃণমূল ঘরছাড়াদের মানুষ ভুঁইয়া আশ্রয় দিয়েছিল সে কথা অমূল্য মাইতি ভুলে যাওয়াতেই এ সব অভিযোগ করছেন।”