খাদ্য দফতর এ বার পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিল। দফতরের প্রায় সব অফিসই এত দিন ভাড়া বাড়িতে চলত। কিংবা অন্য কোনও অফিসে বসতেন আধিকারিকেরা। এ বার প্রতিটি স্তরেই নিজস্ব অফিস তৈরিতে উদ্যোগী হল দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা খাদ্য দফতরের অফিসটিও এত দিন চলত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল লাগোয়া একটি ভাড়া বাড়িতে। সেখানেই রয়েছে মেদিনীপুর মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের অফিসও। আগে সেটি ছিল রাজা বাজারের কাছে। ভাড়া বাড়িতে হওয়ায় ছোট্ট ছোট্ট অংশে একাধিক আধিকারিককে বসতে হত। ফাইল রাখার ক্ষেত্রেও স্থান সঙ্কুলান হত না। ফলে নিত্য কাজে আসা সাধারণ মানুষকেও ঝক্কি পোয়াতে হত।
ব্লকস্তরে খাদ্য দফতরের এই অফিস অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেখানেই নতুন রেশন কার্ড তৈরির জন্য আসেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের মানুষ। কোনও রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা-ও সেখানেই জানাতে হয়। ইন্সপেক্টরদের ঘুরে ঘুরে পরিদর্শনও করার কথা। কিন্তু ব্লক অফিসে খাদ্য দফতরের অফিস থাকায় দু’টি সমস্যা দেখা দিত। অভিযোগ, বহু সময়েই খাদ্য দফতরের ইন্সপেক্টরেরা গরহাজির থাকতেন। যেহেতু ব্লক অফিস খোলা, সকলেই বুঝতেন অফিস খোলা রয়েছে। অন্য দিকে, কোনও প্রয়োজনে ইন্সপেক্টর কোথায় জানতে চাইলে বলে দেওয়া হত, তিনি রেশন দোকান পরিদর্শনে গিয়েছেন। কিন্তু নিজস্ব অফিস থাকলে তা খুলে রাখতেই হবে। অফিস তালাবন্ধ থাকলে তা সকলের নজরে পড়বে। ফলে বন্ধ হবে ফাঁকিও।
এ বার থেকে ব্লক অফিসে অনলাইনের মাধ্যমে নতুন রেশন কার্ড দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। খাদ্য দফতর জানিয়েছে, নতুন অফিস তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি অফিসে থাকবে ইন্টারনেট সংযোগ। রেশন কার্ডের জন্য কেউ আবেদন করলেই তা অনলাইনে দফতরের ওয়েবসাইটে দিয়ে দিতে হবে। তারপর বিডিও-র অনুমতি নিয়েই দিয়ে দেওয়া হবে নতুন রেশন কার্ড। নিয়মিত ওয়েবসাইট আপডেট করার জন্য দু’টি ব্লক পিছু একজন করে কম্পিউটার জানা লোকও নিয়োগ করা হবে। তাঁরা দু’টি অফিসে ঘুরে ঘুরে প্রতিদিনের কাজকর্ম ওয়েবসাইটে আপলোড করবেন। তার জন্য কম্পিউটারও এসে গিয়েছে বলে খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে শুরু হয়ে গিয়েছে অফিস নির্মাণের কাজও। অফিসগুলি তৈরি করা হচ্ছে ব্লক অফিসের কাছেই। যাতে যে কোনও ক্ষেত্রে বিডিও-র সহযোগিতাও পাওয়া যায়। খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্রুত গতিতে কাজ শেষ করে এই নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ব্লকে ব্লকে নতুন অফিস ও অনলাইনে রেশন কার্ডের আবেদন শুরু হয়ে গেলে সাধারণ মানুষকে আর হয়রান হতে হবে না।
এ বার জেলা অফিস স্থানান্তরিত হতে চলেছে কালেক্টরেটে। কালেক্টরেটে একটি নতুন সংখ্যালঘু ভবন তৈরি করা হয়েছে। তারই তিনতলায় স্থানান্তরিত হবে এই অফিস। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস দু’য়েকের মধ্যেই সব কাজ সম্পূর্ণ করে ওখানেই চলে যাবে জেলা অফিস। তার সঙ্গে ওখানেই থাকবে মেদিনীপুর মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের অফিসও। এ ছাড়া ঝাড়গ্রামেও মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের অফিস তৈরির জন্য জমি দেখা চলছে জোর কদমে। জমি পাওয়া গেলে সেখানেও তৈরি করা হবে নিজস্ব ভবন। খড়্গপুরের ক্ষেত্রেও তাই। খড়্গপুরের মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে একটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। যেখানে খড়্গপুর মহকুমার প্রায় সব সরকারি অফিস ওই ভবনে যাবে। সেখানেই থাকবে খড়্গপুর মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের অফিসও।
এ বার ব্লকেও তৈরি হচ্ছে ইন্সপেক্টরদের অফিস। এত দিন এই অফিস চলত বিডিও অফিসে। বিডিও অফিসের কোনও একটি ছোট্ট ঘর খাদ্য দফতরের ইন্সপেক্টরকে দেওয়া হত। এ বার প্রতি ব্লকেই ইন্সপেক্টরদের নিজস্ব অফিস তৈরির উদ্যোগ নিল খাদ্য দফতর। ইতিমধ্যেই সেই কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে প্রথম ধাপে ১৫টি ব্লকে অফিস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় জানান, “দ্বিতীয় ধাপে বাকি ব্লকেও খাদ্য দফতরের নিজস্ব অফিস তৈরি করা হবে।”