দুর্ভোগে নিত্যযাত্রীরা

সন্ধ্যা নামলেই শিল্পশহরে উধাও বাস

রাত সাড়ে ৮টা। হলদিয়া রানিচক মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মহিষাদলের গাড়ুঘাটার বাসিন্দা বিজন প্রামাণিক। বিজনবাবু হলদিয়া বন্দরের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তাঁর কথায়, “সাড়ে আটটার দিকে বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারি, জাতীয় সড়কগামী শেষ বাস চলে গিয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গাড়ি করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।” রাত ৯টা। হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজারের সামনে রানিচকের বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন রাকেশ ঝা, নবীন দাসেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৬
Share:

হলদিয়ার হাতিবেড়িয়ায় অন্ধকারে বাসের জন্য অপেক্ষা।—নিজস্ব চিত্র।

রাত সাড়ে ৮টা। হলদিয়া রানিচক মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মহিষাদলের গাড়ুঘাটার বাসিন্দা বিজন প্রামাণিক। বিজনবাবু হলদিয়া বন্দরের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তাঁর কথায়, “সাড়ে আটটার দিকে বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারি, জাতীয় সড়কগামী শেষ বাস চলে গিয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গাড়ি করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।”

Advertisement

রাত ৯টা। হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজারের সামনে রানিচকের বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন রাকেশ ঝা, নবীন দাসেরা। রাকেশবাবু, নবীনবাবুদের কথায়, “রাত বাড়লেই বাস উধাও হয়ে যায়। তখন বাড়ি ফেরাই দুষ্কর ।”

শিল্পশহর হলদিয়ার বিভিন্ন কারখানায় কাজ করতে আসেন দূর-দূরান্তের বহু কর্মীর। রাতে কাজের শিফট শেষে বাড়ি ফিরতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন তাঁরা। সারাদিন হলদিয়া থেকে জেলা সদর তমলুক, মেচেদা রেল স্টেশন পৌঁছতে বাস পেতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু সন্ধে নামলেই ছবিটা বদলে যায়। রাত আটটার পরে উধাও হয়ে যায় বাস। তখন সুযোগ বুঝে রমরমা বাড়ে বিভিন্ন বেসরকারি যাত্রীবাহী গাড়ির। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে বাধ্য হন নিত্যযাত্রীরা।

Advertisement

সম্প্রতি হলদিয়া পুরসভা ও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ (এইচডিএ)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হলদিয়া মেলায় রাতের শহরে পরিবহণ সমস্যার কথা তুলে ধরেন দুই শিল্পসংস্থার কর্তা। তাঁদের অভিযোগ, “রাত আটটার পর হলদিয়াতে যাত্রীবাহি বাসের দেখা মেলে না। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভন্ন কারখানার বহু কর্মীর রাতের শিফটে ডিউটি থাকে। যে সব শিল্প সংস্থার নিজস্ব গাড়ি আছে তারা রাতের শিফটের কর্মীদের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দেয়। কিন্তু যে সব শিল্পসংস্থায় এই ব্যবস্থা নেই, সেখানকার কর্মীরা রাতে বাড়ি ফিরতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন।” সন্ধ্যার পর হলদিয়ায় পরিবহণের সমস্যার কথা মানছেন হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডলও। তিনি জানান, সন্ধ্যার পর যাতে বিভিন্ন রুটে আরও বাস বাড়ানো যায় সে বিষয়ে পরিবহণ দফতরের আধিকারিককে চিঠি দেব।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাস ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়া টাউনশিপ বাস টার্মিনাস থেকে বিভিন্ন রুটের প্রায় ২৫০টি বাস চলাচল করে। সারাদিন ১০-১৫ মিনিটের ব্যবধানে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করে। কিন্তু সন্ধ্যার পর যাত্রী কম থাকায় বিভিন্ন রুটে বাসের সংখ্যা কমতে থাকে। মেচেদা থেকে ওই রুটে হলদিয়া আসার শেষ বাস রয়েছে রাত সাড়ে ৮টায়। হলদিয়া-মেচেদা ভায়া দুর্গাচক-তমলুক রাস্তায় হলদিয়া টাউনশিপ থেকে শেষ বাস ছাড়ে রাত সাড়ে ৮টায়। তার আগে ১৫-২০ মিনিট অন্তর বাস রয়েছে। হলদিয়া-কুকড়াহাটি ভায়া দুর্গাচক রুটের শেষ বাস ছাড়ে রাত ৯ টা ২০ মিনিটে। তেমনি হলদিয়া-কুকড়াহাটি ভায়া বালুঘাটা ব্রজলালচক রুটের শেষ বাস ছাড়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। রাত ১২টা থেকে পুনরায় হলদিয়া থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ে।

অন্য দিকে, প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টাউনশিপ বাস টার্মিনাস থেকে ২২টি সরকারি বাস ছাড়ে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত আধ ঘণ্টা অন্তর ও দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা অন্তর সরকারি বাস ছাড়ে। হলদিয়া টাউনশিপ থেকে দিনের শেষ সরকারি বাস ছাড়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ। রাত বাড়লে কমতে থাকে বাসের সংখ্যাও। হলদিয়া থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ভবানীপুরের কাষ্ঠখালির বাসিন্দা সুব্রত প্রধান হলদিয়া টাউনশিপের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তিনি জানান, রাতের দিকে বাস কম থাকায় সমস্যা হয়। অধিকাংশ দিন হলদিয়া থেকে জাতীয় সড়ক ধরে মেচেদাগামী শেষ বাস থাকে না। ফলে সন্ধ্যায় কাজের চাপে অফিস থেকে বেরতে দেরি হলে সমস্যা হয়।

নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার বেরাও। তাঁর অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন রুটে অনেক অনুমতিবিহীন গাড়ি চলাচল করে। ফলে দিনের বেলাতেই বাস ব্যবাসীয়রা মার খাচ্ছেন। তাই রাতের দিকে যাত্রী কম হওয়ার আশঙ্কায় বাস ব্যবসায়ীরা বাস চালাতে চাইছেন না। তাই বাস ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়েন, সেই বিষয়টি দেখে এ ব্যাপারে প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাস ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সামসেল আরেফিন জানান, সন্ধ্যার পর যাত্রী সংখ্যা কম থাকায় বাসের পরিমাণও কম রয়েছে। আগে রাত সাড়ে ৯টার পরেও হলদিয়া থেকে বাস ছাড়ত। কিন্তু বিভিন্ন রুটে বেআইনি গাড়ি বেড়ে যাওয়ার দিনের বেলাতেই বাসগুলি মার খাচ্ছে। তবে রাতের দিকে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নেব।

জেলাশাসক অন্তরা আচার্য জানান, আমরাও চাইছি রাতের দিকে হলদিয়া থেকে বিভিন্ন রুটে আরও বেশি বাস চলুক। তবে যাত্রী কমের কথা বলে বাস মালিকরা রাতের দিকে বাস চালাতে আগ্রহ দেখায় না। তাঁর আশ্বাস, বাস মালিকরা হলদিয়া থেকে যাতে রাতের দিক আরও বেশি সংখ্যক বাস চালান, তার ব্যবস্থা করা হবে। তবে শিল্পশহরে অনুমতিবিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্য প্রসঙ্গে করা বাস মালিকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement