সুষ্ঠু পরিবহণ নেই, মার খাচ্ছে বেলদার ব্যবসা

শহর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবেও গুরুত্ব বাড়ছে বেলদার। আর তার প্রধান কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকার অবস্থান। বেলদার একদিকে রয়েছে জাতীয় সড়ক। আর একদিকে রেলপথ। মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে রাজ্য সড়ক। সড়ক ও রেলপথের এমন মেলবন্ধন থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাবে গড়ে ওঠেনি সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা। ফলে, সংলগ্ন গ্রাম থেকে বেলদা যাতায়াতে যেমন অসুবিধা, তেমনই শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়াও রীতিমতো ঝক্কির।

Advertisement

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৪
Share:

জায়গা নির্দিষ্ট হলেও হয়নি বাসস্ট্যান্ড। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

শহর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবেও গুরুত্ব বাড়ছে বেলদার। আর তার প্রধান কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকার অবস্থান। বেলদার একদিকে রয়েছে জাতীয় সড়ক। আর একদিকে রেলপথ। মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে রাজ্য সড়ক। সড়ক ও রেলপথের এমন মেলবন্ধন থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাবে গড়ে ওঠেনি সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা। ফলে, সংলগ্ন গ্রাম থেকে বেলদা যাতায়াতে যেমন অসুবিধা, তেমনই শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়াও রীতিমতো ঝক্কির। ব্যবসার উন্নতিতেও প্রধান বাধা এই বেহাল পরিবহণ।

Advertisement

প্রথমেই ধরা যাক রেলের কথা। আগে বেলদা দিয়েই যেতে হত কাঁথি। কাঁথির কাউকে কলকাতা যেতে হলে ভরসা ছিল বেলদা। এই কারণেই বেলদা থেকে যে রাস্তাটি কাঁথি চলে গিয়েছে, তার নাম কাঁথি রোড। আর বেলদা স্টেশনের নাম ছিল ‘কন্টাই রোড স্টেশন’। এই নাম পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন বেলদাবাসী। রেল অবরোধ হয়েছেন। নামও পাল্টেছে স্টেশনের। বেলদা-হাওড়া একটি লোকাল ট্রেনও আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন বেলদাবাসী। কিন্তু সেই ট্রেন এখন জলেশ্বর পর্যন্ত নিয়ে যেতে চান রেল কর্তৃপক্ষ। তার প্রতিবাদে ফের আন্দোলন শুরু হয়েছে। সরব ব্যবসায়ীরাও।

বেলদাবাসীর দাবি, বেলদা-হাওড়া ট্রেন তখনই জলেশ্বর পর্যন্ত নিয়ে যেতে দেব, যদি হিজলি-হাওড়া লোকাল ট্রেনটিকে বেলদা পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়। বেলদা-হাওড়া লোকাল বাঁচাও ও যাত্রী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মৃণালকান্তি দত্তের কথায়, “রেলের শর্ত অনুযায়ী যত টাকার টিকিট বিক্রি হওয়ার কথা, বেলদা স্টেশনে তার কয়েকগুণ বেশি টিকিট বিক্রি হয়। তবু কেন ট্রেনটিকে জলেশ্বর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে।” ব্যবসায়ী রাজু চাণ্ডকের কথায়, “বেলদা থেকে ট্রেনটি ছাড়ে। বেলদাতেই মানুষ সিট পান না। ব্যবসায়ীদের কলকাতা যাতায়াতে ভীষণ সুবিধে হয়। বিশেষত মালপত্র নিয়ে আসার ক্ষেত্রে।”

Advertisement

বেলদা শহরের মধ্যেও পরিবহণ ব্যবস্থা চূড়ান্ত বেহাল। যাতায়াতের ভরসা এখনও সেই রিকশা। স্টেশন থেকে কলেজ, স্টেশন থেকে স্কুল, বাজার প্রতিটি পথে অটো চালানোর দাবি উঠছে। কারণ অটোতে টাকা যেমন কম লাগে, তেমনই দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনো যায়। সেই ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদেরও। বেলদাতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশো বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার। বাজারের প্রয়োজনে বেলদার উপরেই নির্ভরশীল নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি, দাঁতনের মতো লাগোয়া এলাকাগুলি। ভসরাঘাটে সুবর্ণরেখার উপর সেতু নির্মাণ হয়ে গেলে নয়াগ্রামের মানুষও এই বাজারে আসবেন। এমনকী ওড়িশার জলেশ্বরও বেলদার পাইকারি বাজারের উপরে নির্ভরশীল। সেই পাইকারি বাজারের আসল নাম সত্য নারায়ণ মন্দির পাড়া সবাই ভুলে গিয়েছে। এলাকাটি লাখপতি রোড নামেই পরিচিত। দিনে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয় এই পাইককারি বাজারে। অথচ তার উপযুক্ত কোনও পরিকাঠামোই নেই। নেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। সাইকেল, মোটরসাইকেল, চার চাকার ভিড়ে অপরিসর রাস্তা আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। পা ফেলার জায়গা থাকে না।

ব্যবসার স্বার্থে এখানে বড় বাসস্ট্যান্ড চালু করা প্রয়োজন। কয়েক বছর আগে তার তোড়জোড়ও শুরু হয়। কিন্তু যে জায়গাটি বাছা হয়, তা অত্যন্ত ঘিঞ্জি হওয়ায় বাসস্ট্যান্ড এখনও চালু করা যায়নি। আশপাশের গ্রামের সঙ্গে বেলদার নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে ঘন ঘন ট্রেকার চালানোর দাবিও উঠেছে। বর্তমানে কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ট্রেকার চললেও তা নিয়মিত নয়। কেশিয়াড়ি, দাঁতন যাওয়ার রাস্তায় রেললাইনের উপর ওভার ব্রিজ তৈরির দাবিও রয়েছে। এক সময় স্টেডিয়াম তৈরির জন্য জায়গা ঘেরা হয়েছিল। সেই জমি এখনও পড়ে।

পঞ্চায়েতের বক্তব্য, সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যে বেলদার জন্য এত কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সে জন্যই জোরাল হচ্ছে বেলদাকে পুরসভায় উন্নীত করার দাবি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সনাতন মঙ্গলের কথায়, “বেলদাকে পুরসভা করতে বর্তমান সরকার উদ্যোগী হয়েছে। শীঘ্রই যাতে তা হয়, আমরাও চেষ্টা করছি।” বেলদা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের মৎস্য দফতরের স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্টও বলেন, “প্রতিদিন যে ভাবে শহর বাড়ছে, শহরে শিক্ষিত ও চাকুরিজীবী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে শহরকে আধুনিক ভাবে গড়ে তোলা খুবই জরুরি।”

পুরসভা তৈরির ব্যাপারে ইতিমধ্যেই সমীক্ষা হয়েছে। তার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রস্তাবিত বেলদা পুরসভার এলাকা ধরা হয়েছে ১৯.৩৬ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের খসড়া জনগণনা অনুযায়ী জনসংখ্যা হল ৩৮,৮২০। এর মধ্যে ৫৮.৯০ শতাংশ মানুষই ব্যবসা অথবা চাকরির উপর নির্ভরশীল। মূলত, চারটি পঞ্চায়েতের ২৩টি গ্রাম নিয়ে পুরসভা হবে। এর মধ্যে রয়েছে বেলদা-১ পঞ্চায়েতের বড় মাতকাতপুর, বেলদা, বিনোদপুর, হরগোবিন্দপুর, বাখরাবাদ পঞ্চায়েতের আকন্দ, মান্না গ্রাম পঞ্চায়েতের কসবা-আসন্দ, পলশা, হরিবাড়, বুধিচক, উত্তর ভেটিয়া, যাদবচক ও বেলদা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মহম্মদপুর-১,২,৩, দেউলি, সুসিন্দা-১, ২, ছোট মাতকাতপুর, কুলি, ময়নাপাড়া, বাড়বেলিয়া, পানিগাটিয়া ও গঞ্জ।

কত দ্রুত বেলদা পুরসভা হয় আর এলাকার চেহারা পাল্টায়, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন বেলদাবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement