সেবাই তাঁর ধর্ম।
সেই ১৯ বছর আগে থেকে তাঁর কর্মজীবনের শুরু। তখন থেকেই বেলদার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবিকার কাজ করেন সুপ্রীতিকণা মণ্ডল। ২০০৬ সাল থেকে রানিসরাই গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজে যোগ দেন তিনি। এক বছর আগে থেকে আগর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করেন সুপ্রীতিদেবী। সেই সময় শিশু ও মায়ের টিকাকরণ, কুষ্ঠ, টিবি দূরীকরণে সচেতনতা শিবির থেকে মানুষের নানা সেবার কাজে এগিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে সুপ্রীতিদেবীকে। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ গত ১২ মে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল অ্যাওয়ার্ড’-এ তাঁকে সম্মানিত করা হয়। প্রতি বছরই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক দেশের সেরা সেবিকাদের সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রদান করে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত একমাত্র সেবিকা হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন সুপ্রীতিকণাদেবী।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রে এই পুরস্কার প্রদানের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। একমাত্র, সরকারিক্ষেত্রে কর্মরত সেবিকারাই অনলাইনে সেই আবেদনপত্র পূরণ করতে পারেন। আবেদন করার সময় সরকারি সেবিকাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে চাকরির খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানাতে হয়। সেই অনুযায়ী গত বছরের শেষ দিকে অনলাইনে আবেদন জানান আগর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবিকা সুপ্রীতিকণাদেবী। বাছাইপর্ব শেষে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাঁর নামই সেরা সেবিকা হিসেবে নির্বাচিত হয়।
রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে আপ্লুত সুপ্রীতিকণাদেবী বলেন, “রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেওয়াটা একটা স্বপ্ন। এই স্মৃতি কোনওদিন ভোলার নয়।” পুরস্কার নিয়ে গত শুক্রবারই স্বামীকে নিয়ে দিল্লি থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। তাঁর স্বামী শুভাশিস দাস আগর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হেলথ-অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরত। বেলদার বাসিন্দা সুপ্রীতিকণাদেবী কলেজে পড়ার সময়েই মেদিনীপুর মেডিক্যালে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। নার্সিং প্রশিক্ষণ শেষ করে ফের স্নাতকস্তরের পড়াও শেষ করেন তিনি। তারপরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর স্তর সম্পূর্ণ করেন। সুপ্রীতিকণাদেবী বলেন, “পড়াশুনো শেষ করে সহপাঠীদের অনেকেই স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি করছিল। কিন্তু আমি এই নার্স হওয়ার আশাতেই বসে ছিলাম। সে সময় মনে হয়েছিল ভুল করছি না তো! তবে এখন মনে হচ্ছে ভুল করিনি।” নারায়ণগড় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মণ্ডল বলেন, “অন্যদের কাছে উনি দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন। ওঁনাকে ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছি।”