লোকসভা ভোটের ফল বলছে, দলের জনসমর্থনে ভাটা পড়েছে। সিপিএম নেতৃত্বও মানেন, পরিস্থিতি রাতারাতি কাটানো সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে জনসমর্থন ফিরে পেতে জেলা নেতৃত্ব পাখির চোখ করছে দলের নীচু তলার নেতৃত্বকেই। গত রবিবার মেদিনীপুর শহরে এক বৈঠক হয়। সেখানে লোকাল কমিটির সদস্যদের কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের সম্মেলন আসন্ন। মূলত, তাকে সামনে রেখেই সভা বলে দলীয় সূত্রে খবর।
নেতৃত্ব মাঝেমধ্যেই এমন নির্দেশের ফিরিস্তি দেন। কিন্তু, তা কী আদৌ যথাযথ ভাবে রূপায়িত হয়, সংগঠন কী চাঙ্গা হয়! সবথেকে বড় কথা নজরদারি কতটা থাকে। সিপিএম নেতৃত্বের জবাব, ‘দাওয়াইয়ে কাজ হয় তো বটেই। তবে সব কাজের হাতেনাতে ফল মলে না। অপেক্ষা করতে হয়।’ আর তৃণমূল-সহ বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘কোনও নির্দেশেই সিপিএমের সংগঠনকে বাঁচানো যাবে না। বাংলায় সিপিএমের মৃত্যু হয়েছে।’
রবিবারের সাধারণ সভায় উল্লেখযোগ্য ভাবে উপস্থিত ছিলেন লোকাল কমিটির সদস্যরা। প্রথমে জোনাল কমিটির সদস্যদের নিয়ে জেলা সদরে দলের সাধারণ সভা হয়। তবে, লোকাল কমিটির সদস্যদের নিয়ে জেলা সদরে সভা করার নজির সাম্প্রতিক অতীতে নেই বলেই দলের এক সূত্রের দাবি। ওই সভাতেই ১৩ দফা লিখিত নির্দেশ দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম নেতৃত্ব।
কী নির্দেশ? পার্টির নীতি ও সিদ্ধান্তকে জনসমক্ষে যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে লোকাল কমিটিকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। নির্দেশে বলা হয়েছে, যে কোনও ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানো এবং সেই অনুযায়ী জনগণকে সামিল করার ক্ষেত্রে লোকাল কমিটিকে তৎপর হতে হবে। শাখা, সহায়ক গ্রুপ ও তার এলাকার গণসংগঠন ও সংগ্রাম আন্দোলনের কাজকর্মের তদারকি করতে হবে। প্রতিটি বিষয়ের গভীরে গিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জানতে হবে এবং নির্ধারিত কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সক্রিয় ভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে। গণসংযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে লোকাল কমিটির সদস্যদের মাসে অন্তত চারটি গ্রাম বা পাড়া বৈঠক সংগঠিত করতে হবে। পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা গড়ে তোলা এবং এলাকায় নানা ধরনের সামাজিক ও সেবামূলক কাজে উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়া খুবই জরুরি।
একদা ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুরে গত লোকসভা নির্বাচনে নজিরবিহীন ভরাডুবি হয়েছে সিপিএমের। জেলা নেতৃত্ব মনে করেন, এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে স্থানীয় ইস্যুকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।