পরপর হার ছিনতাইয়ের ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে মেদিনীপুর শহরে।
বুধবার ভরদুপুরে শহরের দু’টি এলাকায় হার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দুই ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা বাইকে এসে মহিলার গলার হার ছিনতাই করে চম্পট দেয়। একটি ঘটনা ঘটে বেলা দেড়টা নাগাদ, শহরের অরবিন্দনগরে। অন্যটি বেলা আড়াইটে নাগাদ, শহরের সুভাষনগরে। শহরবাসীর অভিযোগ, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড়সড় ফাঁক তৈরি হয়েছে। সর্বত্র পুলিশি টহল ঠিকঠাক হচ্ছে না। পুলিশি নিরাপত্তার ফাঁক গলেই দুষ্কৃতীরা শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। রাত পর্যন্ত অবশ্য এই দুই ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি খোওয়া যাওয়া হারও। পুলিশ অবশ্য মনে করছে, শহরবাসীর উদ্বেগের কিছু নেই। পুলিশের আশ্বাস, শহরে নজরদারি থাকে। প্রয়োজনে নজরদারি বাড়ানো হবে।
শহরের এসিএমওএইচ অফিসে কাজ করেন শিপ্রা চক্রবর্তী। সুভাষনগরে রয়েছে ওই অফিস। বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ অফিস থেকে বের হয়েছিলেন শিপ্রাদেবী। সিএমওএইচ অফিসে আসার জন্যই তিনি অফিস থেকে বেরোন। কিছুটা আসার পর এক যুবক মোটর বাইকে করে তাঁর সামনে আসে। মুহুর্তে গলার হার ছিনতাই করে চম্পট দেয়। ঘটনার পর চিৎকার করেন শিপ্রাদেবী। স্থানীয় কয়েকজন ওই বাইকের পিছু নেয়। অবশ্য ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে।
শিপ্রাদেবী বলেন, “যুবকটি কিছু দূরে দাঁড়িয়ে একজনের সঙ্গে কথা বলছিল। আমি অফিস থেকে বেরোনোর পরপরই হার ছিনতাই করে নিয়ে পালায়। সম্ভবত কিছু দিয়ে হারটি কাটা হয়েছে। না-হলে তো গলায় জোর টান পড়ত।” দুপুর দেড়টা নাগাদ একই ভাবে অরবিন্দনগরেও হার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এই সময় বাড়ি থেকে বেরোন দিপালী চক্রবর্তী নামে এক গৃহবধূ। আচমকা মোটর বাইকে করে এসে এক যুবক তাঁর গলার হার ছিনতাই করে পালায়।
একই ভাবে পরপর হার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই শহরবাসী উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি, শহরের মিত্র কম্পাউন্ড, রবীন্দ্রনগর এলাকায় হার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অন্য কয়েকটি এলাকাতেও একই ঘটনা ঘটেছে।
শহরবাসীর অভিযোগ, মেদিনীপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে। রাতে তো দূরের কথা, দিনেদুপুরে রাস্তায় চলাফেরা করাই দায়। কখনও দুষ্কৃতীরা মহিলাদের গলার হার ছিনতাই করে পালাচ্ছে। কখনও বাড়ির সামনে থেকে, দোকানের সামনে থেকে, অফিসের সামনে থেকে মোটর বাইক-সাইকেল চুরি করছে। জনবহুল এলাকার মধ্যে সকলের নজর এড়িয়ে কী ভাবে এই দুষ্কৃতীরাজ রাজ চলছে, সেই প্রশ্নও উঠছে। পুলিশেরই এক সূত্রে খবর, পরপর কয়েক’টি ঘটনার পর মেদিনীপুরের মতো শহরে পুলিশি টহলদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। সেই মতো সাদা পোষাকের পুলিশও নজরদারি শুরু করে। কিন্তু, তাও চুরির ঘটনায় লাগাম টানা না-যাওয়ায় চিন্তিত পুলিশের একাংশও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন শহরে নেশাগ্রস্ত যুবকদের সংখ্যা বাড়ছে। অসামাজিক কাজকর্মও বাড়ছে। পুলিশের এক সূত্রে খবর, নেশাগ্রস্ত যুবকেরাই চুরি- ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুক্ত হয়ে পড়ছে। বুধবারের দু’টি ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেই মনে করেন অনেকে। কেন রাশ টানা যাচ্ছে না? জেলা পুলিশের এক অফিসারের কথায়, “এমন ঘটনা এড়াতে গেলে আগে দুষ্টচক্রগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। মূল পাণ্ডাদের কয়েকজনকে এখনও পাকড়াও করা যায়নি। তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে।”