তৃণমূলকে ভোট দিতে না চাওয়ায় এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা-সহ তিন জনকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে পিংলার জলচকের উত্তরবস্তি এলাকার এই ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা সাইনাজ বিবি ও তাঁর মা হাসিনা বিবিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসিনার স্বামী শেখ সারাফত পিংলা ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে শেখ আমিন ও কোহিনুর বিবি নামে দুই তৃণমূল সমর্থককে শনিবার রাতে গ্রেফতার করেছে পিংলা থানার পুলিশ। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই, পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার শেখ সারাফতের বাড়ির বেড়া ভেঙে দিয়েছিল পড়শি শেখ মজিবুলের খড়ের গাড়ি। শেখ মজিবুল এলাকায় তৃণমূলের বুথস্তরের কর্মী বলে পরিচিত। এরপর বাড়ির সামনে দিয়ে ফের ওই গাড়ি নিয়ে যেতে বাধা দেন সারাফতের স্ত্রী হাসিনা বিবি। এ নিয়ে শুক্রবার রাতে সারাফত ও মজিবুলের বচসা বাধে। ক্রমশ তা দাঁড়ায় হাতাহাতিতে। শনিবার সকালে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে সারাফত জানিয়েছেন, মজিবুল ও তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীরা তাঁকে তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিতে বলেছিলেন। সারাফত কয়েকদিন আগে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি করার জন্য পঞ্চায়েত থেকে কিছু টাকা পেয়েছেন। পুলিশের কাছে সারাফত অভিযোগ করেছেন, ওই তৃণমূলকর্মীরা তাঁর কাছ থেকে সেই টাকার অর্ধেকও দাবি করেন। তাতে তিনি রাজি না হওয়াতেই এই মারধর। এমনকি তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হন অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে ও স্ত্রী। তিনি এই ঘটনায় মজিবুল ছাড়াও পিয়ারজান বিবি, কোহিনুর বিবি, শেখ আমিন, শেখ রাজা-সহ সাত জনের নামে পিংলা থানায় অভিযোগ করেছেন তিনি।
রবিবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে হাসিনা বিবি বলেন, “তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার জন্য আমার স্বামীকে ওরা হুমকি দিয়েছিল। তারপর গত বুধবার চারজন লোককে সঙ্গে নিয়ে মজিবুল আমাদের বাড়িতে এসেও জোড়াফুলে ভোট দিতে বলে। বলেছিলাম, আমি জোড়াফুলে ভোট দিলেও তোমরা যখন বিশ্বাস করো না, তাহলে তোমাদের ভোট দেব না। এরপরই গাড়ি দিয়ে আমাদের বেড়া ভেঙে দেওয়া হয়। পরে বাড়িতে ঢুকে মারধরও করা হয়।”
এই এলাকাটি ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। এখানে ভোট ১২ মে। ওই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া বলেন, “এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা-সহ তিন জনকে মারধরের এমন ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতার সমান। মুখ্যমন্ত্রী জেলায় এসে যেরকম উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য করে গিয়েছেন, এটা তারই জের। ঘটনাটি আমরা নির্বাচন কমিশনে জানাবো।” তবে ঘটনার বিষয়ে পিংলার ব্লক তৃণমূল সভাপতি গৌতম জানা বলেন, “এটা পারিবারিক বিষয়। এর সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।” খড়্গপুরের এসডিপিও অজিত সিংহ যাদব বলেন, “ইন্দিরা আবাসের টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে একটা অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মারধর ও শ্লীলতাহানির মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”