মৃতার শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুরের পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় এক নাবালিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল নন্দীগ্রামের পুরুষোত্তমপুর গ্রামে। অভিযোগ, অতিরিক্ত পণের দাবিতে সিদ্দিকা খাতুন (১৫) নামে ওই কিশোরীকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুন করেছে। মৃতার শাশুড়িকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে স্বামী পলাতক। শুক্রবার সকালে দেহ উদ্ধারের পরে মৃতার বাপের বাড়ির লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা সিদ্দিকার শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুরও চালায়।
নন্দীগ্রামের বিএমটি গার্লস হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী সিদ্দিকার আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। শ্বশুরবাড়ি থেকেই পড়াশোনা করছিল ওই কিশোরী। আগামী বুধবার থেকে স্কুলে টেস্ট পরীক্ষা শুরু। তার আগেই এমন একটি ঘটনায় গোটা এলাকা শোকস্তব্ধ। হতভম্ব সহপাঠীরাও। সিদ্দিকার বাবা আবুল কালাম আজাদ পেশায় দর্জি। কাজের সূত্রে তিনি কলকাতায় থাকেন। ক’দিন আগে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি জানান, মেয়ে কোত্থেকে টেস্ট পরীক্ষা দেবে, তা নিয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিদ্দিকার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। ঠিক হয়েছিল বাপের বাড়ি থেকেই সে পরীক্ষা দেবে। সেই মতো আজ, শুক্রবার বাপের বাড়িতে আসার কথা ছিল সিদ্দিকার। তার আগেই ঘটল এই ঘটনা। মৃতার বাবার কথায়, “ভালবেসে বিয়ে করায় মেয়ের শাশুড়ি ৩০ হাজার টাকা ও গয়না চেয়ে প্রায়ই নির্যাতন চালাত। সিদ্দিকা ওর মাকে সব জানিয়েছিল। আমাদের অনুমান মেয়েকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুষোত্তমপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় দর্জি শেখ রবাইদুলের সঙ্গে পাশের সরবেড়িয়া গ্রামের কিশোরী সিদ্দিকার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাস দুয়েক আগে প্রথমে দু’জনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। পরে দুই পরিবারের লোকজন আলোচনা করে শাস্ত্রীয় মতে তাদের বিয়ে দেয়। শ্বশুরবাড়ি থেকেই স্কুলে যেত সিদ্দিকা।
এ দিন সকালে টালির চাল দেওয়া মাটির বাড়ির বারান্দায় কড়িকাঠ থেকে ঝুলন্ত ওই কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো ছিল। ঘটনা জানাজানি হতেই সিদ্দিকার বাপেরবাড়ির লোকজন সেখানে আসেন। কিন্তু ঘটনার পরেই সিদ্দিকার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় সকলের সন্দেহ বাড়ে। মৃতার বাপের বাড়ির লোকজন অভিযোগ তোলেন, সিদ্দিকাকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সিদ্দিকার শাশুড়ি রহিলা বিবিকে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় শাশুড়ি রহিলা বিবিকে। উত্তেজিত জনতা সিদ্দিকার শশুরবাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পরে বাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে নন্দীগ্রাম থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার স্বামী ও শ্বশুরের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।