আগামী অর্থবর্ষের জন্য লোধাদের আবাসন প্রকল্পে বরাদ্দ একেবারে ছেঁটে ফেলল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। চলতি আর্থিক বছরেও এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি টাকা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১০ শতাংশ বা তার বেশি বরাদ্দ মিলেছে। কিন্তু লোধা আবাসন প্রকল্পে এক টাকাও বরাদ্দ মেলেনি!
অথচ সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেড়েছে আড়াইগুণ! চলতি আর্থিক বছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি টাকা। আগামী আর্থিক বছরে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ কোটি। স্বাস্থ্যখাতে ৮ কোটি থেকে বেড়ে বরাদ্দ হয়েছে ১০ কোটি। পিছিয়ে পড়া গ্রামের উন্নয়নেও বরাদ্দ বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হয়নি। চলতি আর্থিক বছরে যা ছিল ৩ কোটি আগামি অর্থবর্ষে মাত্র ১ কোটি বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ৪ কোটি টাকা। সোমবার সাধারণ সভায় এই বাজেট পাশও হয়ে গিয়েছে।
স্বভাবতই ক্ষুব্ধ লোধা সম্প্রদায়ের লোকজন। লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাই নায়েক বলেন, “বামফ্রন্ট সরকারও কিছু করেনি। এরাও (তৃণমূল) শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। কাজের কাজ কিছুই করছে না। এর প্রতিবাদে আমরাও আন্দোলন গড়ে তুলব।” বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “লোধা উন্নয়নে বাম সরকারও ব্যর্থ হয়েছিল। এই সরকারও ব্যর্থ।”
কেন লোধাদে বাড়ি তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ হল না? জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের বক্তব্য, “লোধা উন্নয়নে আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। সেই খাতে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ বরাদ্দ করার কথা। তাই ওই খাতে জেলা পরিষদ আলাদা করে বরাদ্দ ধরেনি।”
সোমবার তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ প্রথম জেলা সংসদ ডেকেছিল। এ দিনই সাধারণ সভায় বাজেট পাশ করানো হয়। আগামী আর্থিক বছরে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫৭৮ কোটি ৪৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। চলতি আর্থিক বছরে তা ছিল ২৫৬ কোটি ১৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় দ্বিগুণ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন ও অধিকার প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে একটু বেশি। বাকি ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ১০ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে। যদিও বিরোধী কংগ্রেসের অভিযোগ, পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে আরও বেশি বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। বিকাশবাবু বলেন, “রাস্তা, কালভার্ট, সেতু, হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে আরও বেশি বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি আমরা।” ভবিষ্যতে সে বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জেলা পরিষদ জানিয়েছে।
জেলা পরিষদে ছ’মাস অন্তর জেলা সংসদ করার কথা। তবে দেড় বছরে এই প্রথম সভা হল। জেলা পরিষদে তৃণমূলের দলনেতা অজিত মাইতি বলেন, “জেলা পরিষদ গঠনের পরই লোকসভার নির্বাচন হওয়ায় ২টি সভা করা যায়নি।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “সর্বত্র সংসদ সভা করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। যদি কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি সংসদ সভা না করে তাহলে ১৫ দিনের মধ্যে তা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে জেলা পরিষদেও যাতে ৬ মাস ছাড়া জেলা সংসদ বসানো যায় সে জন্যও চেষ্টা করা হবে।”