আদালতে পুনমদেবী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
ঝাড়গ্রাম শহরের তরুণ ব্যবসায়ী সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকিকে অপহরণ করে খুনের ঘটনার অন্যতম ‘চক্রী’ পুনম শর্মাকে তিন দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠাল ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালত। রকি খুনের মূল অভিযুক্ত অশোক শর্মার স্ত্রী বছর সাতচল্লিশের পুনমকে গত সোমবার সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুর কাদুগোন্দানাহাল্লি থানার গোবিন্দপুরা এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করেছিল ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার পুনমকে বেঙ্গালুরুর একাদশ মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হলে ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে পুনমকে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজিরের নির্দেশ হয়েছিল। সেই মতো শুক্রবার পুনমকে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে তোলা হয়।
এ দিন দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ পুলিশের গাড়িতে করে পুনমকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু পুনম পুলিশকে জানান, তাঁর হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। দু’জন মহিলা পুলিশ কর্মী পুনমকে পাঁজাকোলা করে গাড়ি থেকে নামিয়ে আদালত কক্ষের বারান্দায় নিয়ে যান। কোর্ট লক-আপের ভিতর অবশ্য পুনমকে ঢোকানো হয় নি। একটি চেয়ারে বসতে দেওয়া হয় তাঁকে। মাথায় হেলান দিয়ে সারাক্ষণ দু’চোখ বুঁজে ছিলেন তিনি। ক্রমাগত ঠোঁট কাঁপছিল তাঁর। রকি খুনের তদন্তের স্বার্থে পুনমকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় পুলিশ। এ দিন অভিযুক্তের তরফে কোনও আইনজীবী দাঁড়ান নি। বিচারক কৃষ্ণমুরারিপ্রসাদ গুপ্ত পুনমকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আগামী সোমবার ফের পুনমকে আদালতে হাজির করা হবে। এ দিন আদালত প্রাঙ্গণে হাজির বেশ কিছু মহিলা ‘রকির খুনি অশোক শর্মা ও পুনম শর্মার ফাঁসি চাই’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন।
পুলিশ জানিয়েছে, রকি খুনের মূল অভিযুক্ত অশোক শর্মা গ্রেফতার হওয়ার পরে পুনম ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। তিনি পুলিশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ঘাটশিলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। কিন্তু পরে পুনম গা ঢাকা দেন। গত দু’মাস ধরে পুনমকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল ঝাড়গ্রাম পুলিশ। পরে পুলিশ জানতে পারে পুনম বেঙ্গালুরুতে ছেলের কাছে রয়েছেন। গত ২৫ এপ্রিল ব্যবসায়িক কাজে মোটর বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান বলরামডিহির বাসিন্দা বছর পঁচিশের সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকি। গত ৬ মে ওড়িশার গঞ্জাম জেলার রম্ভা থানার পুলিশ রকির দেহ উদ্ধার করে। অবশেষে বিশেষ সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে রকিকে অপহরণ করে খুনের মূলপাণ্ডা হলেন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ঠিকাদার অশোক শর্মা। রকির পরিবারের সঙ্গে অশোকের যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল। গত ৮ মে অশোক ও তাঁর ভাইপো সুমিত শর্মা এবং অশোকের পরিচারক টোটন রাণাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অশোকের দাদা রমেশ শর্মা, রমেশের ছোট ছেলে রোহিত শর্মা ও রমেশের শ্যালক দীনেশ শর্মাকে গ্রেফতার করে।