পিংলায় রোড-শোতে কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া । ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
‘আপনি স্তালিন না হিটলার, যে আপনার নির্দেশে জনগণ উঠবে-বসবে!’ তৃণমূলনেত্রীর মুখে নিজের ‘জামানাত জব্দ’ হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এমনই প্রশ্ন ছুঁড়লেন ঘাটাল লোকসভার কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া। বৃহস্পতিবার পিংলা ব্লকে রোড-শো ছিল মানসবাবুর। এর মাঝে কুঞ্জপুরে একটি পথসভাও করেন তিনি। সেখানেই তৃণমূলনেত্রীর প্রতিক্রিয়ায় এই পাল্টা তোপ দাগেন।
বুধবারই মানস ভুঁইয়ার ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিত সবংয়ে এসে মানসবাবুর জামানাত জব্দের ডাক দিয়ে ব্যক্তি-আক্রমণ শানিয়ে ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন মানস ভুঁইয়ার বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়ে থাকল সেই প্রসঙ্গই। এ দিন পিংলার রামপুর থেকে ঘাটালের কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে রোড-শো বের হয়। সেখানে মানসবাবু ছাড়া ছিলেন জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া, তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে আসা পিংলার নেতা গৌর ঘোড়াই প্রমুখ। এলাকার মানুষের কথা শুনতে পায়ে হেঁটেই গ্রামের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলেন তিনি। ডাডরা, সুরচক, ক্ষীরাই, কাঁটাপুকুর, কুঞ্জপুর, কুলতাপাড়া হয়ে রোড-শো পৌঁছায় স্মৃতিদিন্দা হাইস্কুলের কাছে। সেখানে স্কুল-পড়ুয়ারা রাস্তার দু’ধারে তাঁকে দেখতে ভিড় জমান। গোবর্ধনপুর হয়ে ডঙ্গলসায় এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে, বিকেলে ফের পিণ্ডরুই, বড়িশা, বাখনাবাড়, জলচক, মালিগ্রাম কেলেয়ারা হয়ে নয়ায় শেষ করেন রোড-শো।
রোড-শো চলাকালীন কুঞ্জপুরে পথসভা করেন ঘাটলের কংগ্রেস প্রার্থী। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানান মানসবাবু। তৃণমূল কেন্দ্র দখল করার যে ডাক দিয়েছে, তার জন্য ২৭২টি আসন জরুরি, তা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “তৃণমূল নেত্রী নিজের ও দলের মুখটা আয়নায় একটু দেখবেন।” মানসবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলছেন, তাতে বাংলার সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে।” তারপরই তিনি বলেন, “আপনি কংগ্রেসকে চোর বলছেন? এই কংগ্রেস থেকেই তো আপনার জন্ম!”
এ বারের ভোট-প্রচারে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই সংস্কার, ডেবরা-সবং ২৭ কিলোমিটার সড়কের সম্প্রসারণ নিয়ে জোর প্রচার চালাচ্ছে কংগ্রেস-তৃণমূল দু’পক্ষই। কংগ্রেসের দাবি, কেন্দ্র টাকা দিয়েছে। আর তৃণমূলের দাবি বর্তমান সরকারের আমলেই এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে। বুধবার তৃণমূলনেত্রী দাবি করেছিলেন, ‘ওই রাস্তা সংস্কার রাজ্য সরকার করেছে। নদী সংস্কার প্রকল্পেও রাজ্য ৭০০ কোটি টাকা দিয়েছে।’ এই তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করে মানসবাবু বলেন, “সবং-ডেবরা রাস্তার টাকা কেন্দ্র দিয়েছে। কেলেঘাই-কপালেশ্বরীর সংস্কারের ৭৫ ভাগ টাকাও কেন্দ্র দিয়েছে। এর আবার যতটুকু কাজ আমার সেচমন্ত্রী থাকার সময়ে হয়েছে। তার পরে এক ইঞ্চিও এগোয়নি।” অসত্য বলার জন্য তৃণমূলনেত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও তিনি জানান।
নারায়ণগড়ের সভায় তৃণমূলনেত্রী কংগ্রেস ও সিপিএম মিলে কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেলের বাড়িতে বসে ওসি, বিডিও ও এসপিদের বদলির তালিকা নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছেন এ দিন সে কথা তুলেও কটাক্ষ করেন মানসবাবু। গত বিধানসভা ভোটের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, “আপনি আহমেদ পটেলকে অপমান করবেন না। সে দিন সনিয়া গাঁধী, আহমেদ পাটেল আর এই মানস ভুঁইয়া ২২৯টি আসন আপনাকে ছেড়ে দিয়ে মাত্র ৬৫টি আসন নিয়েছিলাম। তা না হলে আপনি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন!” এ ধরনের মন্তব্যের জন্য তৃণমূলনেত্রীর ডাক্তারি পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে মন্তব্য করেন চিকিৎসক-প্রার্থী মানস ভুঁইয়া।