পরিচালন সমিতির মেয়াদ ফুরিয়েছে। তবু ভোট হচ্ছে না। বদলে প্রশাসক বসানো হয়েছে। প্রতিবাদে সরব হলেন বিদায়ী বোর্ডের বামপন্থী সদস্যরা। ঘটনাটি মেদিনীপুর শহরের পিপলস্ কো- অপারেটিভ ব্যাঙ্কের। বামপন্থী সদস্যদের দাবি, তৃণমূলই ভোট চাইছে না। তাই প্রশাসন এখানে ভোট করানোর ঝুঁকি নিচ্ছে না! প্রশাসকের আড়ালে শাসক দলই ব্যাঙ্ক পরিচালনার কর্তৃত্ব হাতে নিল। যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী প্রবণতারই প্রকাশ।
ব্যাঙ্কের বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান বিদ্যুত্বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “নিয়মানুযায়ী বিদায়ী পরিচালন সংস্থার মেয়াদ শেষের আগেই নির্বাচনের মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের গণতান্ত্রিক মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠন করার কথা। এটা আগের সমস্ত নির্বাচন পর্যন্ত হয়ে এসেছে। এ বারই তা হল না।” তাঁর কথায়, “আমরা চাই, অবিলম্বে ব্যাঙ্কের নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হোক।” সিপিএমের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক সারদা চক্রবর্তীর বক্তব্য, “আসলে তৃণমূল ভোটে যেতে ভয় পাচ্ছে।” যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তীর কথায়, “মানুষ আমাদের পাশেই রয়েছেন। আমরাও ওই ব্যাঙ্কের নির্বাচন চাইছি। প্রশাসনিক এক জটিলতার কারণে মনে হয় ভোট করাতে একটু দেরি হচ্ছে।” ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারি পিপলস্ ব্যাঙ্কের নতুন পরিচালন সমিতি গঠন হয়েছিল। সেই হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি। ’৯৩ সাল থেকেই ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতি ছিল বামেদের দখলে। বাম- সমর্থিত প্রার্থীরা গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে লড়াই করেছেন।
বুধবার বিদায়ী বোর্ডের বামপন্থী সদস্যরা এক সাংবাদিক বৈঠক করেন। তাঁদের দাবি, বিদায়ী পরিচালন সমিতি গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারের কো- অপারেটিভ নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন ঘোষণার জন্য চিঠি দেয়। কিন্তু প্রায় দেড় মাস প্রশাসন এই বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। শেষমেষ ৭ নভেম্বর নির্বাচন আধিকারিক নিয়োগ করে। নির্বাচন আধিকারিক বিদায়ী বোর্ডের মেয়াদের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে উদ্যোগী হন। বিজ্ঞপ্তিও দেন। ২০ নভেম্বর শাসক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন আধিকারিককে ঘেরাও করে বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। নির্বাচন আধিকারিক সেই চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ওই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান রাজ্য সরকার ও শাসক দল সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ব্যাঙ্কের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিদায়ী বোর্ডের বামপন্থী সদস্যরা। তাঁদের আশঙ্কা, বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কের নির্বাচন যেমন মেদিনীপুরের বদলে কেশপুরে করা হয়েছিল, তেমন পিপলস্ ব্যাঙ্কের নির্বাচনও মেদিনীপুরের বদলে চন্দ্রকোনা রোড বা অন্যত্র করা হতে পারে। যাতে তৃণমূল গায়ের জোরে ভোট করতে পারে। বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান বিদ্যুত্বাবুর কথায়, “ব্যাঙ্কের ৮০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা। তাই আমরা নির্বাচন মেদিনীপুর শহরে করারই দাবি করছি।” তৃণমূলের শহর সভাপতি আশিসবাবু অবশ্য বলেন, “ভোটে জেতার জন্য আমাদের জোরজুলুম করতে হয় না। ওরাই (বামেরা) এতদিন এটা করে এসেছে।”
কেন বিদায়ী বোর্ডের মেয়াদ ফুরনোর আগে নির্বাচন হল না? সদুত্তর এড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিষ্ট্রার অফ কো- অপারেটিভ সোসাইটি (এআরসিএস) মদনমোহন ঘোষ বলেন, “ওই ব্যাঙ্কে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। শীঘ্রই নির্বাচন হবে।” প্রশ্ন উঠছে, নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারী করেও কেন তা প্রত্যাহার করা হল? এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।