মোগলমারির সখীসেনা ঢিবিতে চলছে খনন। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের দ্বিতীয় পর্যায়ের খননকাজ শুরু হল বুধবার। রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে দাঁতনের মনোহরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোগলমারির সখীসেনা ঢিবিতে মাটি কাটার কাজ শুরু হয়েছে। এ দিন কোদাল দিয়ে মাটি কেটে খনন কাজের সূচনা করেন দাঁতন ভট্টর কলেজের অধ্যক্ষ পবিত্রকুমার মিশ্র। মঙ্গলবারই অবশ্য মোগলমারিতে এসে পৌঁছন পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্মীরা। এ দিন মূলত খননের আগে যে নক্সা বা পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় সেই কাজ হয়েছে।
অবশ্য এর আগেও ২০১৩ সালে উৎখননের কাজ চালিয়েছিল রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ। সেই সময়ই সেখানে ‘শ্রী বন্দক মহাবিহার’ নামে ফলক উদ্ধার হয়। যদিও ২০০৩-২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক প্রয়াত অমল দত্তের উদ্যোগে ছ’দফায় খনন কাজ চলে। খননে আবিষ্কার হয় বৌদ্ধবিহার। উদ্ধার হয় স্ট্যাকো মূর্তি, প্রবেশদ্বার, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের থাকার জায়গা, বেশ কিছু উৎসর্গ পাত্র, গুপ্ত উত্তর যুগের মিশ্র ধাতুর মুদ্রা-সহ বহু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ ছিল এই বৌদ্ধবিহার খননের কাজ। ফলে অবহেলায় মোগলমারির পুরাবস্তু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। রাজ্যের তরফে আবেদনের পরে চলতি মাসের ৭ তারিখ ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দ্বিতীয় পর্যায়ের এই খনন কাজের অনুমতি দেয়।
মোগলমারিতে খনন কাজে স্থানীয় ১৫ জন শ্রমিক নিযুক্ত হয়েছেন। খননের প্রথম দিনে সখীসেনা ঢিবির উত্তর-পূর্ব কোণে দু’টি ট্রেঞ্চে ২৫ সেন্টিমিটার করে মাটি কাটা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। খনন প্রক্রিয়ার ডিরেক্টর তথা রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের পুরাতাত্ত্বিক প্রকাশ মাইতি বলেন, “আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত এই খনন কার্য চালানো হবে বলে ঠিক হয়েছে। প্রয়োজনে খননকার্যের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়ানো হতে পারে।”
ফের খনন কাজ শুরু হওয়ায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। অধ্যক্ষ পবিত্রকুমার মিশ্র বলেন, “মোগলমারির বৌদ্ধবিহারের পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্ব অসীম। এই পুরাস্থলটিকে খনন ও যথাযথ সংরক্ষণ করে দর্শনীয় স্থান হিসেবে তুলে ধরা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে দাঁতনের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোতেও বদল আসবে। আমার ধারণা, এই বিষয়টি রাজ্য গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।” তরুণ সেবা সঙ্ঘের যুগ্ম-সম্পাদক অতনু প্রধানের কথায়, “মোগলমারিতে ফের খননকাজ শুরু হওয়ায় আমপরা খুশি। এই কাজে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।”