গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবির পর লোকসভায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বামেরা। তা জানতে ১৬ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে লোকসভা ভোটে জেলায় প্রাপ্ত ভোটের হার ফের উর্ধ্বমুখী হবে বলেই আশাবাদী পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিএম। বুধবার দুপুরে জেলা কার্যালয়ে দলের জেলা নেতারা এক পর্যালোচনা বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারও। দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে বিভিন্ন এলাকা ধরে ধরে পর্যালোচনা করা হয়েছে। ওই বৈঠক শেষে দলের নেতাদের আশা, পঞ্চায়েতের থেকে লোকসভায় ভোট বাড়ছেই। অন্তত, ৪- ৫ শতাংশ ভোট বাড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ জেলায় বামেরা ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। লোকসভায় তা বেড়ে হতে পারে ৩৮-৩৯ শতাংশ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপকবাবু অবশ্য এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ। তিনি বলেন, “দলের সাংগঠনিক বৈঠক ছিল। কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” বামেদের প্রাপ্ত ভোট কী এ বার বাড়বে? তাঁর জবাব, “ভোট বাড়বে বলেই আমাদের আশা।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে এ বার দু’দফায় ভোট হয়েছে। ৭ মে মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে ভোট হয়েছে। ১২ মে ঘাটালে ভোট হয়েছে। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে এই তিনটি আসনই দখল করে বামেরা। মেদিনীপুর থেকে জেতেন সিপিআইয়ের প্রবোধ পণ্ডা। ঘাটাল থেকে জেতেন সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্ত। ঝাড়গ্রাম থেকে জেতেন সিপিএমের পুলিনবিহারী বাস্কে। প্রবোধবাবু এ বারও মেদিনীপুর থেকে বামফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন। পুলিনবাবুও প্রার্থী হয়েছেন ঝাড়গ্রাম কেন্দ্র থেকে। অন্য দিকে, গুরুদাসবাবু অব্যাহতি নেওয়ায় ঘাটাল থেকে বামফ্রন্টের প্রার্থী হন সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা।
রাজ্যে পালাবদলের আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ‘লালদুর্গ’ বলেই পরিচিত ছিল। তবে পালাবদলের পর দ্রুত রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে। একের পর এক এলাকায় সিপিএমের সংগঠনে ধস নামে। বদলে প্রভাব বাড়ে তৃণমূলের। গত বিধানসভা-পঞ্চায়েতের পর পুরভোটেও সাফল্য পেয়েছে শাসক দল। ভরাডুবি হয়েছে বামেদের। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৬৭টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে মাত্র ২টি বামেদের দখলে এসেছে। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে একটিও দখলে আসেনি। ফল যে এতটা খারাপ হতে পারে, তার আগাম আঁচও করতে পারেননি নেতৃত্ব।
জেলার সিপিএম নেতারা অবশ্য মনে করছেন, পঞ্চায়েতের মতো পরিস্থিতি লোকসভায় হয়নি। তৃণমূল ততটা সন্ত্রাস করতে পারেনি। তাই ভোটের হার বাড়বেই। এমনকী, মেদিনীপুরের মতো আসন নিয়েই আশায় রয়েছেন তাঁরা। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় বামেদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪৪ শতাংশ। দু’বছরের মাথায় ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তা কমে হয় ৩৪ শতাংশ। একদা ‘লালদুর্গে’ দু’বছরের ব্যবধানে ১০ শতাংশ ভোট কমায় দলের উদ্বেগ বাড়ে। পরবর্তী সময় দলীয়স্তরে এ নিয়ে পর্যালোচনাও হয়। নেতৃত্বের একাংশ এও মেনে নেন, শুধু তৃণমূলের সন্ত্রাস নয়, সার্বিক ভাবে সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রভাবও পঞ্চায়েত নির্বাচনে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন এলাকায় সংগঠন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। দলের হয়ে কাজ করার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মীও ছিল না। এরপরই সংগঠন পুনর্গঠনে উদ্যোগী হন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। জেলায় বিজেপির ভোট বাড়বে বলেও মেনে নিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের অভ্যন্তরীন পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, খড়্গপুর- দাঁতন- গোপীবল্লভপুরের মতো এলাকায় বিজেপির ভোট অনেকটাই বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে বিজেপি যে শুধু তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কেই থাবা বসাবে তা নয়, বামেদের ভোটব্যাঙ্কেও থাবা বসাবে। তৃণমূলের যদি ৩ শতাংশ ভোট বিজেপি কাটে, তাহলে বামেদেরও ১ শতাংশ ভোট বিজেপি কাটার সম্ভাবনা রয়েছে।
নেতৃত্ব মনে করছেন, পঞ্চায়েতের নিরিখে অনেক এলাকাতেই এ বার ভাল ফল হবে। প্রচুর ভোট বাড়বে। গড়বেতা, গোয়ালতোড়, কেশপুরের মতো এলাকাতেও ভোট বাড়বে। তবে প্রত্যাশা মতো নয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপকবাবুর কথায়, “এই সব এলাকায় তৃণমূল ভোট লুঠ করেছে। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি। যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পেরেছেন, সেখানেই আমাদের ভোট বাড়বে।”