আড়াই বছরেও শেষ হয়নি নেতাইয়ের রাস্তার কাজ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
জঙ্গলমহলে লোকসভা ভোটের প্রচারে সিপিএমের অন্যতম অস্ত্র নেতাই!
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি এই নেতাই গ্রামেই দলীয় শিবির থেকে গুলি চালনার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছিল সিপিএম। ওই ঘটনায় চার মহিলা-সহ ৯ জন গ্রামবাসী নিহত হন। নেতাই-কাণ্ডকে হাতিয়ার করে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে অভাবনীয় ফল করেছিল তৃণমূল। তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াই বছর। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা সত্ত্বেও নেতাই গ্রামের পিচ রাস্তা তৈরি শেষ হয়নি। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও ‘নেতাই-কাঁটা’ নিয়ে বেজায় বিব্রত রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। আর এলাকাবাসীর ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ভোটের ময়দানে রাজনৈতিক সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সিপিএম।
‘গণহত্যায় অভিযুক্ত’ সিপিএম এতদিন ‘নেতাই প্রসঙ্গ’ সুকৌশলে এড়িয়ে যেত। নেতাই-কাণ্ডে অভিযুক্ত অনুজ পাণ্ডে, ডালিম পাণ্ডে, চণ্ডী করণ, ফুল্লরা মণ্ডলের মতো লালগড়ের আট শীর্ষ সিপিএম নেতা-নেত্রী এখনও ফেরার। জেলবন্দি রয়েছেন দলের ১২ জন স্থানীয় নেতা-কর্মী। স্বভাবতই গত বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে কার্যত লালগড়ে পায়ের তলায় সিপিএমের মাটি ছিল না। নেতাইয়ের গুলি চালনার ঘটনাটি আদালতে বিচারাধীন বলে এতদিন নেতাই প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে যেতেন সিপিএমের নেতারা। কিন্তু একটা রাস্তাই পাল্টে দিয়েছে পরিস্থিতি। লোকসভা ভোটের আগে তাত্পর্যপূর্ণভাবে সিপিএমের প্রচারে উঠে আসছে নেতাই গ্রামের রাস্তার প্রসঙ্গ। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথাঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, “জঙ্গলমহলে তৃণমূলের সরকার কেমন উন্নয়ন করছে তার উদাহরণ নেতাই গ্রামের রাস্তাটি। আড়াই বছরেও রাস্তাটির কাজ শেষ করা যায় নি কেন, এবার সেই প্রশ্নের জবাব জনগণ ওদের কাছে জানতে চাইবেন।”
রাজ্যের ক্ষমতায় আসার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাই গ্রামের কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১১ সালের অক্টোবরে লালগড় ব্লক সদরের বাঘাকুলি থেকে নেতাই হয়ে ডাইনটিকরি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটারের ওই রাস্তাটি পিচের করা হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। ২০১২ সালের এপ্রিলে লালগড়ে এক প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে নেতাইয়ের তরুণী জনতা আদক মঞ্চে উঠে জানান, রাস্তার কাজ শুরুই হয় নি। ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় রাস্তাটি পাকা করার কাজ শুরু করতে বছর গড়িয়ে যায়। প্রথমে ওই রাস্তার কাজের টেন্ডারে কেউ যোগ দিতে চায়নি। পরে কলকাতার একটি সংস্থা কাজের বরাত নেয়। ২০১২ সালের মাঝামাঝি রাস্তার কাজ শুরু হয়। কাজের বরাতপ্রাপ্ত মূল সংস্থাটি আবার অন্য একটি সংস্থাকে (সাব কন্ট্রাক্ট) রাস্তার কাজটি করার দায়িত্ব দেয়। কিন্তু দেখা যায়, সাব কন্ট্রাক্ট নেওয়া দ্বিতীয় সংস্থাটির পরিকাঠামোগত ঘাটতি রয়েছে। গত বছর ২০ ডিসেম্বর বকেয়া টাকার দাবিতে নেতাই গ্রামের রাস্তা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই সংস্থার লোকজনকে ঘেরাও করেন একদল মালমশলা সরবরাহকারী। এরপর অন্য একটি সংস্থাকে সাব কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন সংস্থাটি গত বছর ২৩ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে। ৬ কিলোমিটারের ওই রাস্তাটির জন্য ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। তবে কাজ এখনও শেষ হয় নি।
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “নির্বাচনের প্রচারে ব্যস্ত রয়েছি। বেশ কিছুদিন রাস্তাটির খোঁজখবর নেওয়া হয় নি। খোঁজ নিয়ে জানাব।” লালগড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণগোপাল রায়ের বাড়ি নেতাই গ্রামে। কৃষ্ণগোপালবাবুর কথায়, “রাস্তার কাজ চলছে। এখনও পিচঢালা-সহ বেশ কিছু কাজ বাকি আছে।” আর লালগড়ের সিপিএম নেতা-কর্মীদের একাংশের দাবি, “নেতাই গ্রামে আমরা দেওয়াল লিখন করতে পারি নি। তবে রাস্তা নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ এতটাই যে, যে রাস্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচারে ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।”