ইকো-পার্কে চড়ুইভাতি। —নিজস্ব চিত্র।
বড়দিনে ঢল নেমেছিল মেদিনীপুরের সব পার্কেই। তবে ভিড়ের নিরিখে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে মেদিনীপুরের শিশুদ্যান। শিশুদ্যানে বৃহস্পতিবার প্রায় ১১ হাজার মানুষ এসেছিলেন। বেশিরভাগই কচিকাঁচা। শেষ কবে ছুটির দিনে এখানে এত ভিড় হয়েছে, মনে করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষও।
শহরে যে ক’টি পার্ক রয়েছে, তার মধ্যে এই অরবিন্দ শিশুদ্যান এবং চিড়িয়াখানা অন্যতম। দিন বদলেছে। অবশ্য শিশুদ্যানের হাল সে ভাবে ফেরেনি। বরং দিন বদলের সঙ্গে এর রঙ যেন ফিকেই হয়েছে। আগে ময়ূর ছিল। এখন নেই। আছে বলতে পাখি, রাজহাঁস, শেয়াল, পায়রা, খরগোশ। কিন্তু, এ সব আর ঘনঘন দেখতে কার ইচ্ছে করে! তাও আবার টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় এসে!
তা-ও কেন ‘রেকর্ড’ ভিড়?
শহরের বাসিন্দা তমাল দাস, তনুশ্রী রায়রা বলছেন, “ছুটির দিনটা সকলেই একটু অন্য ভাবে কাটাতে চান। বড়দিনটা আবার সকলের কাছেই স্পেশাল। শহরে আর চিড়িয়াখানা নেই। তা ছাড়া শিশুদ্যানের পরিবেশটা ভাল। চারদিক ঘেরা আছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা চিড়িয়াখানায় এসে পশু-পাখিদের দেখে মজাও পায়।” তনুশ্রীদেবীদের মতে, ভাল পরিবেশের জন্যই অনেকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই শিশুদ্যানে আসেন। কর্তৃপক্ষের উচিত, নতুন পশু-পাখি এনে শিশুদ্যানটিকে সাজানো। আরও আকর্ষণীয় করে তোলা। না হলে আগামী দিনে শিশুদ্যানের রং ফিকে হয়ে যাবে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে অর্থের সমস্যা রয়েছে। পার্কের জন্য আলাদা করে কোনও অর্থ বরাদ্দ হয় না। টিকিট বিক্রি করে যে অর্থ আসে, তা দিয়েই পার্ক চলে। কর্মচারীদের মাইনে থেকে পশু-পাখির দেখভাল, শিশুদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণ সবকিছুই। শিশুদ্যানের পরিদর্শক সুব্রত সরকার বলছেন, “আমরা নতুন কিছু করার চেষ্টা করছি। তবে অর্থের অভাবে যা ভাবছি তা করতে পারছি না।” মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তেরও বক্তব্য, “বড়দিনে শিশুদ্যানে প্রচুর ভিড় হয়েছে বলে শুনেছি। প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য এলেই শিশুদ্যানটি নতুন করে সাজানো হবে।”
বড়দিনে শহর এবং শহরতলির অন্য পার্কগুলোতেও ভালই ভিড় জমেছিল। পুলিশ লাইন পার্কে প্রায় দেড় হাজার মানুষ এসেছিলেন। ক্ষুদিরাম পার্কে প্রায় দু’হাজার মানুষ এসেছিলেন। গোপ পার্কে প্রায় ছ’হাজার মানুষ এসেছিলেন। চন্দ্রকোনা রোডের পরিমল কাননে প্রায় ন’হাজার মানুষ এসেছিলেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বেশ কয়েকটি ইকো ট্যুরিজম পার্ক রয়েছে। শীতের সময় এই সব পার্কে প্রচুর লোকজন আসেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পাশাপাশি পিকনিক করেন। মূলত, দু’টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এক সময় এই সব পার্কগুলো গড়ে তোলা হয়েছিল। এক, ভ্রমনপিপাসুদের বিনোদন। দুই, স্থানীয়দের বিকল্প আয়ের সংস্থান। পার্ক তৈরি হলে একদিকে যেমন এলাকার সৌন্দর্য বাড়বে, প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসবেন, অন্য দিকে তেমন পার্ককে ঘিরে স্থানীয় কয়েকজন মানুষের কাছে রুজি-রোজগারের সুযোগ আসবে। তাঁরা ছোট দোকান করতে পারবেন। হয়েছেও ঠিক তাই। অনেকেই মনে করেন, পার্কগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়ন হলে ভিড় আরও বাড়বে। সংস্কারের অভাবে ইকো পার্কগুলো অনেকটাই বেহাল। কোথাও পিকনিক সেডগুলো ধুঁকছে। কোথাও পানীয় জলের সুব্যবস্থা নেই। কোথাও আবার বাগানগুলোর সময় মতো পরিচর্যা করা হয় না। জেলা পরিষদের বন কর্মাধ্যক্ষ কাজী আব্দুল হামিদের আশ্বাস, “শীতের সময় পার্কগুলোয় প্রচুর মানুষ আসেন। এ বারও বড়দিনে প্রচুর ভিড় হয়েছে। আমাদের উদ্যোগ আছে। কিছু পরিকল্পনাও হয়েছে। তবে অর্থাভাবে সব কাজ সময় মতো করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান হলেই পার্কগুলো নতুন করে সাজানো হবে।”