কেশপুরের মহিষদায় সিপিএমের ঘরছাড়ারা।—নিজস্ব চিত্র।
ভোট পরবর্তী গোলমালের জেরে তাদের বহু কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হয়েছে বলে দাবি করল সিপিএম। দলের দাবি, কেশপুরেই ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা বেশি। অন্তত ৭০০ কর্মী- সমর্থককে ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এঁদের অনেকে পার্টি অফিসে রয়েছেন, অনেকে আবার আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। পিংলা বিধানসভার খড়্গপুর-২ ব্লকের রাধানগর এবং পপড়আড়া গ্রামে সোমবার রাতে বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় ১৫ জন গ্রামবাসী খড়্গপুর শহরের ইন্দার সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও ওই দু’টি গ্রামের প্রায় ৩০জন ঘরছাড়া সিপিএম সমর্থক পরিজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “ভোটের পরও তৃণমূল সন্ত্রাস করছে। আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কেশপুরে প্রচুর মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন।” সন্ত্রাসের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “মিথ্যে কথা। আমরা কাউকে ঘরছাড়া করিনি। এ রকম কোনও খবরও আমার কাছে নেই।” তাঁর দাবি, “সিপিএমের কয়েকজন লোক এলাকায় থাকলেই গোলমাল করে। মানুষ তাদের উপর ক্ষুব্ধ। ভোট দেওয়ার পর তারা নিজেরাই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। আমাদের কর্মীরা কারও গায়ে হাত দেননি। দেবেনও না।” মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তের বক্তব্য, “কী হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি।”
একসময় পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর বামেদের ‘লালদুর্গ’ বলেই পরিচিত ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর অবশ্য ছবিটা বদলে গিয়েছে। দলের কর্মী-সমর্থকেরা ‘প্রতিকূলতার’ মধ্যে রয়েছেন। সংগঠনেও ধস নেমেছে। সিপিএম নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, গত আড়াই বছরে কিছুটা হলেও সংগঠন পুনর্গঠন করা গিয়েছে। দল ফের ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ শুরু করেছে। দলের এক সূত্রে খবর, এ বার লোকসভায় ১৫টি অঞ্চলের মধ্যে ৮টি অঞ্চলে কমবেশি প্রচার করা গিয়েছে। এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই কেশপুরে গোলমাল চলছিল। ভোটের আগে সিপিএম নেতৃত্ব পুলিশ-প্রশাসনের কাছে ঘরছাড়া নেতা-কর্মী-সমর্থকদের তালিকাও জমা দেন। পুলিশি প্রহরায় বিভিন্ন এলাকায় ঘরে ফেরেন সিপিএম নেতা- কর্মী- সমর্থকেরা। সিপিএমের অভিযোগ, ভোট মিটতেই ফের সন্ত্রাস শুরু করেছে তৃণমূল।
রাধানগরের ঘরছাড়াদের একজন বলেন, “সোমবার রাতে আমাদের ভাঙচুর এভং নির্বিচারে মারধর করেছে তৃণমূল। অভিযুক্তরা গ্রামেই ঘুরে বেরাচ্ছে। আমরা আতঙ্কে ঠাঁই নিয়েছি দলীয় কার্যালয়ে।” কেশপুরের সিপিএম নেতা এন্তাজ আলি বলেন, “ইতিমধ্যে ঝেঁতলা, ধলহারা, এনায়েতপুর, সরিষাকোলার প্রচুর কর্মী-সমর্থককে ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তৃণমূলের লোকেরা নানা ভাবে ভয় দেখাচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “সিপিএম এখন চরম সঙ্কটে পড়েছে। ওদের নেতারা বুঝতে পারছে, পার্টির ভবিষ্যত্ একেবারে তলানিতে! আমরা কাউকে ঘরছাড়া করিনি। তৃণমূল সব সময় শান্তির পক্ষে।”