ফের মৃত্যু, প্রশ্ন উঠছে অবাধ নির্বাচন নিয়েই

প্রহৃত হওয়ার তিন দিন পরে সোমবার রাতে কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হল কেশপুরের সিপিএম কর্মীর। সিপিএমের দাবি, তৃণমূলের মারেই নিহত হলেন দলীয় কর্মী উত্তম দোলই (৪৫)। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দোপাধ্যায় বলেন, “শুক্রবার মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন উত্তম দোলই। মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১২
Share:

ছায়া দোলই। নিজস্ব চিত্র

প্রহৃত হওয়ার তিন দিন পরে সোমবার রাতে কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হল কেশপুরের সিপিএম কর্মীর। সিপিএমের দাবি, তৃণমূলের মারেই নিহত হলেন দলীয় কর্মী উত্তম দোলই (৪৫)। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দোপাধ্যায় বলেন, “শুক্রবার মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন উত্তম দোলই। মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে।”

Advertisement

এই ঘটনার পর ফের সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। সিপিএমের অভিযোগ, কেশপুর-সহ ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে অবাধ নির্বাচনের কোনও পরিস্থিতি নেই। সাবেক পাঁশকুড়া লাইনই ফের ফিরিয়ে আনছে তৃণমূল। লাগাতর সন্ত্রাস চালিয়ে নির্বাচন করতে চাইছে। পুরো ঘটনা জেলা প্রশাসনকে জানানোর পাশাপাশি নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদেরও জানিয়েছে সিপিএম। কংগ্রেসের অভিযোগ, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে একজন পুলিশ সুপারকে সরিয়ে কী লাভ হল? তারপরেও কী অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি করা গিয়েছে? কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার-সহ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন আধিকারিকের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।

কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলইয়ের অভিযোগ, “বৃহস্পতিবার গোপীনাথপুর, কলকলী, কাঞ্চনতলা এলাকায় দলীয় প্রার্থী সন্তোষ রাণাকে নিয়ে মিছিল করার পরই তৃণমূল ওই সমস্ত গ্রামে হামলা চালায়। তারই জেরে প্রাণ দিতে হলে আমাদের সক্রিয় কর্মী উত্তম দোলইকে।” এরপরে ৩২ জনের নামে থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিধায়কের অভিযোগ, “এরপরও অভিযুক্ত দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে।” ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, “ঘাটাল ও কেশপুরে খুন হচ্ছে। পতাকা ছেঁড়া থেকে শুরু করে প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। একজন পুলিশ সুপারকে সরিয়ে অন্য পুলিশ সুপার এনেই তা হলে কী লাভ হল!” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “ওখানে একটা গ্রাম্য বিবাদ হয়েছিল শুনেছিলাম। তার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” দলের তরফে কোনও রকম সন্ত্রাস করা হচ্ছে না বলে তাঁর দাবি। তাঁর আশা, “পঞ্চায়েতের মতো লোকসভাও অবাধ, শান্তিপূর্ণ হবে।”

Advertisement

কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার? ওই দিন সকালে দলীয় প্রার্থী সন্তোষ রাণাকে নিয়ে মিছিল ছিল গোপীনাথপুর, কাঞ্চনতলা, কলকলী সহ বিভিন্ন গ্রামে। কর্মসূচী সেরে গ্রাম থেকে ফিরে যান বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। তারপরই দুপুর দেড়টা নাগাদ তৃণমূলের সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা গ্রামে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় বেশ কয়েক জন সিপিএম সমর্থক আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় উত্তমবাবুকে প্রথমে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে, পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। সোমবার রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তম ও সুকুমার দুই ভাই। সুকুমার ওই দিন সিপিএমের মিছিলে গিয়েছিল। সুকুমারকে মারধর করতে হাজির হয়েছিল তৃণমূলের লোকজন। তখন মাঠ থেকে ধান তুলছিলেন উত্তম ও তাঁর স্ত্রী ছায়া। ছায়াদেবী বলেন, “দাদাকে মারধর করছে দেখে ও (উত্তম) প্রতিবাদ করে। তখন ওঁকেই লাঠি দিয়ে মাথায় ও পিঠে মারে। এমনকি মাথা ফেটে গেলেও স্থানীয় কোনও গাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে অস্বীকার করে। পরে পুলিশ এসে ভ্যান রিকশাতে নিয়ে যায়।” উত্তমের ছেলে গঙ্গার কথায়, “ওই ঘটনার পর থেকেই জেঠু পলাতক। আমাদের চাষের জলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বলছে, আগে জেঠুকে নিয়ে আয় তবে জল দেব। বাবাকে হারালাম, এ বার দেখছি, আমাদেরও না খেয়ে মরতে হবে।” এই উত্তমও এক সময় তৃণমূল করত বলেই পরিবারের দাবি। ছায়াদেবী বলেন, “কিছু দিন আগে পর্যন্ত ও তৃণমূলই করত। পরে আবার সিপিএমের দিকে ঝুঁকেছিল। তার এমন মাসুল হবে ভাবতে পারিনি।”

সিপিএম ও কংগ্রেস দু’পক্ষেরই অভিযোগ, বর্তমান পরিস্থিতি অবাধ নির্বাচনের পরিপন্থী। বিশেষত, যত দিন এগিয়ে আসবে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ততই সন্ত্রাস বাড়বে বলেও তাঁদের আশঙ্কা। তার প্রধাণ কারণ হল, ওই কেন্দ্রে ভোট শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ ১২ মে। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রটি একাধিক জেলার সীমান্তে। একদিকে রয়েছে হুগলি, অন্য দিকে হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুর। সীমান্ত এলাকার সব জায়গায় নির্বাচন আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঘাটালের প্রার্থী মানসবাবুর অভিযোগ, “বিভিন্ন এলাকা থেকে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের ঢুকিয়ে দিয়ে ভোট লুটের পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। এখন থেকেই যা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে তাতে পরিস্কার, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে একচেটিয়া ভোট করার লক্ষ্যেই এগোচ্ছে তাঁরা।” আর সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলইয়ের অভিযোগ, “বেআইনি অস্ত্র নিয়ে চারিদিকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তৃণমূল। আতঙ্ক ছড়াতে রাতে অকারণেই গুলি চালিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন গ্রামে। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement