পড়ুয়া নেই, ২০টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত

খাতায় কলমে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। রয়েছেন সহায়িকাও। কিন্তু যাদের জন্য শিক্ষা কেন্দ্র, সেই ছাত্রছাত্রীই নেই! পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে একজনও পড়ুয়া নেই, কোথাও আবার রয়েছে এক জন! হাজিরা খাতা অনুযায়ী একাধিক কেন্দ্রেই ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ২০ বা তারও কম।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৮
Share:

হাতে গোনা পড়ুয়া বিবেকানন্দপল্লির শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে। —নিজস্ব চিত্র।

খাতায় কলমে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। রয়েছেন সহায়িকাও। কিন্তু যাদের জন্য শিক্ষা কেন্দ্র, সেই ছাত্রছাত্রীই নেই!

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে একজনও পড়ুয়া নেই, কোথাও আবার রয়েছে এক জন! হাজিরা খাতা অনুযায়ী একাধিক কেন্দ্রেই ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ২০ বা তারও কম। আবার বহু কেন্দ্রে খাতায়কলমে ছাত্রছাত্রী ৫০-৬০ জন দেখানো হলেও বাস্তবে ১০-২০ জনের বেশি আসে না। পরিস্থিতি দেখে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন একটি সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষা রিপোর্টই বলছে, জেলার ৭৯টি শিক্ষা কেন্দ্রে হাজিরা খাতা অনুযায়ী ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ২০ জনের নীচে। তার মধ্যে কয়েকটি-র ক্ষেত্রে ইচ্ছে করলে ছাত্রছাত্রী জোটানো সম্ভব হলেও হতে পারে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে চেষ্টা করেও লাভ নেই। এ রকম ২০টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র তুলে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, “আমরা সহায়িকাদের জানিয়েছি, যাতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে নজর দেন। পড়ুয়া বাড়ানো একেবারেই সম্ভব হবে না এ রকম প্রায় ২০টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তবে এখনই কেন্দ্র তুলে দেওয়ার পক্ষে মত নেই তৃণমূলের শিশুশিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের জেলা সভাপতি সুজিত ঘোষের কথায়, “আমরাও সংগঠনের পক্ষ থেকে সব সহায়িকাদের অনুরোধ জানিয়েছি যাতে তাঁরা ছাত্র সংখ্যা বাড়াতে সচেষ্ট হন। আশা করি, নিশ্চয় তাঁরা উদ্যোগী হবেন। তারপরেও কাজ না হলে প্রশাসন নিশ্চয় পদক্ষেপ করবে।”

Advertisement

জেলায় মোট ২৪৫৯টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। হাজিরা খাতা অনুযায়ী, মোট ছাত্রছাত্রী প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার। অর্থাৎ প্রতি কেন্দ্রে গড়ে ৪৩ জন পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পড়ুয়া সংখ্যা অনেক কম। যেমন মেদিনীপুর শহরের বরিশাল কলোনি বিবেকানন্দপল্লির শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে হাজিরা খাতায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬২। আছেন চারজন সহায়িকা। কিন্তু কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, মাত্র ২১ জন ছাত্রছাত্রী এসেছে। প্রধান সহায়িকা মীনা দেবের দাবি, “নিয়মিত ৫০ জন আসে। এখন মকর সংক্রান্তির উৎসবের জন্য পড়ুয়া কম এসেছে।” কিন্তু যেখানে ক্লাস হয় সেখানে ৫০ জন বসার জায়গা নেই।

“পড়ুয়া বাড়ানো একেবারেই সম্ভব নয় এমন ২০টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” শ্যামপদ পাত্র, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অন্য দিন এর থেকে বড় জোর ১০-১২ জন বেশি আসে। তার বেশি ছাত্রের দেখা মেলে না। হবিবপুর কালীমন্দিরের কাছে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে আবার দিনে ৮-১০ জনের বেশি ছাত্রের দেখা মেলে না। কিন্তু হাজিরা খাতায় ছাত্র সংখ্যা অনেক বেশি। আর এ নিয়ে কোনও তথ্য দিতে রাজি নন স্কুলের প্রধান সহায়িকা শিপ্রা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে তথ্য চাইলে দিতে পারি। যাকে-তাঁকে তথ্য দেব না।”

এ ভাবেই প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ছাত্র সংখ্যা বাস্তবের তুলনায় বেশি দেখানো হয়েছে। অথচ, এই সব শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে দুই, তিন বা চারজন সহায়িকা রয়েছেন। বর্তমানে এক একজন সহায়িকার মাইনে মাসে সাড়ে ৫০০০ টাকা। এ ছাড়া খরচ রয়েছে মিড ডে মিলের। শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে দেওয়া হয় পোশাকও। এ সব করেও ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়নি।

কেন? প্রশাসন ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এই সব কেন্দ্রগুলি তৈরি হয়েছে অবৈজ্ঞানিক ভাবে। যেখানে কাছাকাছি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেখানেই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রও তৈরি করা হয়েছে। ফলে, এলাকার ছাত্রছাত্রীরা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে যেমন ভর্তি হয় তেমনই প্রাথমিক স্কুলেও ভর্তি হয়। ফলে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে হাজিরা খাতা অনুযায়ী ছাত্র সংখ্যা বেশি। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই পড়ার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে যায়। বেলদা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে ছাত্র সংখ্যা শূন্য। বেলদার বাসিন্দা অমিয় রায়ের কথায়, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় অনেকটাই প্রথা মেনে। কিন্তু শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের পছন্দের লোকজনকে ঢুকিয়ে দেয়। স্বাভাবিক কারনেই সেখানে পঠনপাঠনের মান খারাপ। তাই কে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে ছেলেমেয়েদের পাঠাবে বলুন।”

বিবেকানন্দপল্লির শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই। আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্বাভাবিক কারণেই এই কেন্দ্রে ছাত্র সংখ্যা কম। ফলে কেন্দ্র চলছে। সহায়িকা রয়েছেন। কিন্তু ছাত্র মিলছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement