শহিদ স্মরণে। —নিজস্ব চিত্র।
নন্দীগ্রাম দিবসে সিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্ট ও চার্জশিটের বিরুদ্ধে ফের সরব হলেন তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলায় নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের সপ্তম বর্ষ পূতি অনুষ্ঠানে কোনও রকম মাইক-মাইক্রোফোন বা ‘জাঁক’ ছাড়াই নিজের বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু। নিজের বক্তব্যে তিনি সিবিআইয়ের চার্জশিটকে আক্রমণের পাশাপাশি জমিরক্ষা আন্দোলন পর্বে শহিদ হওয়া পরিবারের পাশে থাকার বার্তাও দেন।
শুক্রবার ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে নন্দীগ্রামের গোকুলনগরের অধিকারী পাড়ায় ও সোনাচূড়ার ভাঙাবেড়ায় শহিদ স্মরণ কর্মসূচিতে এসেছিলেন এসে শুভেন্দু। সেখানে তিনি বলেন, “২০০৭ সালের ১৪ মার্চ ভাঙাবেড়া ও গোকুলনগরের অধিকারী পাড়ায় তৎকালীন রাজ্য সরকারের পুলিশ জমি আন্দোলনে যোগ দেওয়া ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল। এই গুলি চালানার ঘটনাকে তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অসাংবাবিধানিক বলে উল্লেখ করেছিলেন। হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই ওই ঘটনার তদন্ত করেছিল।” শুভেন্দু’র অভিযোগ, “সিবিআই ওই ঘটনার তদন্ত করে চার্জশিটে যে ভাবে পুলিশের গুলি চালনাকে বৈধতা দিতে চেয়েছে, তা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের পরিপন্থী।”
উল্লেখ্য, জমিরক্ষা আন্দোলন পর্বে ১৪ মার্চ সকালে নন্দীগ্রামের গোকুলনগরের অধিকারী পাড়ায় ও সোনাচূড়ার ভাঙাবেড়ার কাছে তালপাটি সেতু পেরিয়ে পুলিশি অভিযানের সময় সেখানে জড়ো হওয়া ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সমর্থক গ্রামবাসীর উপর পুলিশ গুলি চালালে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন বেশ কিছু গ্রামবাসী। ওই ঘটনা নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত করে সিবিআই। সম্প্রতি ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সমর্থক ১৬৬ জনের বিরুদ্ধে হলদিয়া মহকুমা আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। এই চার্জশিটের বিরোধিতা করে আগেই সরব হয়েছেন জমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সম্প্রতি নন্দীগ্রামের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে সিবিআইয়ের ওই চার্জশিটের বিরোধিতা করে নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে সমাবেশ করে সিবিআই’য়ের চার্জশিট পোড়ানোর কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন শুভেন্দু। এ দিন অবশ্য তা না হয়নি। তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অবশ্য ওই দিনের ঘটনায় জড়িত পুলিশ অফিসার-সহ সমস্ত দোষীদের শাস্তির দাবিতে নিরবিচ্ছিন্ন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি এ দিন বলেন, “ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে সিবিআই আদালতে যে চার্জশিট জমা দিয়েছে আমরা তা মানি না। ওই চার্জশিটের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে শহিদ পরিবারের লোকজন হাইকোর্টে মামলা করেছেন। হাইকোর্ট সেই মামলা গ্রহণ করেছে। হাইকোর্টের উপর আমাদের আস্থা আছে। আশাকরি সুবিচার পাব।”
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ অধিকারী পাড়ায় গিয়ে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন শুভেন্দু অধিকারী। শহিদদের উদ্দেশ্যে নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সেখান থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে সোনাচূড়ার ভাঙাবেড়ায় শহিদবেদী ও নবনির্মিত শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে মাল্যদান করেন তিনি। এ দিন ভাঙাবেড়ায় শহিদ স্মরণ কর্মসূচিতে এসেছিলেন ওই দিনের ঘটনায় নিহত সোনাচুড়ার বাসিন্দা সুপ্রিয়া জানার স্বামী সুকুমার জানা। সুকুমারবাবু বলেন, “আমরা নিজেদের জমি-বাড়ি রক্ষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়েছিলাম। ১৪ মার্চ পুলিশ ও সিপিএমের বাহিনী মিলে আমাদের উপর চরম অত্যাচার চালাল।” তাঁর ক্ষোভ, “সিবিআই তদন্ত করে যে ভাবে আমাদের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দিয়েছে তা মানা যায় না। আমরা সুবিচারের আশায় ফের হাইকোর্টে আবেদন করেছি।”
ভাঙ্গাবেড়ায় ক’য়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে শহিদ স্মরণ এবং স্মৃতি স্তম্ভের কাছে গৌরাঙ্গপূজার আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা শেখ সুফিয়ান, আবু তাহের, নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের ঘটনায় নিহত শেখ ইমদাদুলের মা ফিরোজা বিবি, খেজুরির বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল, এসইউসির জেলা সম্পাদক দিলীপ মাইতি, দলের নেতা নন্দ পাত্র, মনোজ দাস প্রমুখ।