ভোটের সর্বদল প্রশিক্ষণ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির হল মেদিনীপুরে। লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই আয়োজন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। কালেক্টরেটের সভাকক্ষে এই শিবিরে সোমবার ছিলেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) আর অর্জুন, জেলার ওসি (ইলেকশন) বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জানানো হয়, কোন ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কী বিধি রয়েছে। উপস্থিত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও নানা প্রশ্ন করেন। উত্তর দেন আধিকারিকেরা। জেলা প্রশাসন মনে করছে, এমন শিবিরের ফলে ভুল বোঝাবুঝি কমবে। সামান্য ভুলভ্রান্তিও এড়ানো সম্ভব হবে।
সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ শিবির শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল ৪টে নাগাদ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৫ জন করে নেতা-কর্মীকে প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছিল। সেই মতো বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা হাজির হন। ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আশিস চক্রবর্তী, জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বাবলু বরম প্রমুখ। গোড়ার দিকেই জেলার ভোটার সংখ্যা কত, তারমধ্যে কতজন পুরুষ, কতজন মহিলা, তা জানিয়ে দেওয়া হয়। এখন জেলার ভোটার সংখ্যা ৪০ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮৫১। এরমধ্যে পুরুষ ২০ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯০৭, মহিলা ১৯ লক্ষ ৮০ হাজার ৯৩৪। অনান্য ১০ (গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার- তালিকা অনুযায়ী)। জেলার ১০০ শতাংশ ভোটারের কাছেই সচিত্র পরিচয়পত্র রয়েছে। এ বার ইভিএমে না-ভোটের (নোটা) বোতাম থাকবে। ভোটাররা ইচ্ছে করলে কোনও প্রার্থীকে ভোট নাও দিতে পারেন।
এ দিন শিবিরে জানানো হয়, নোটার বোতামটি থাকবে একেবারে শেষে। অর্থাৎ, কোনও কেন্দ্রে যদি ৬ জন প্রার্থী থাকেন, তাহলে ৭ নম্বর বোতামটি হবে নোটার। প্রার্থীরা তিনটি করে গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। এর মধ্যে একটি নিজে ব্যবহার করতে পারবেন। একটি প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট ব্যবহার করতে পারবেন। কোন খরচ প্রার্থীর ব্যয়ের হিসেবে থাকবে, কোন খরচ দলের ব্যয়ের হিসেবে থাকবে, তাও এদিন জানানো হয়। জানানো হয়, এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ঠিক কী নির্দেশ রয়েছে।
জেলাশাসকের পাশাপাশি শিবিরে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুশান্ত চক্রবর্তী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অরিন্দম দত্ত, জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক শম্পা হাজরা প্রমুখ। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এমন শিবিরের ফলে সামান্য ভুলভ্রান্তিও এড়ানো সম্ভব হবে।”
বস্তুত, লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। এ রাজ্যের শাসক দল যেমন গত আড়াই বছরে রাজ্য সরকার কী কী উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করেছে, তা প্রচারের সামনে আনছে। তেমন, বিরোধী- শিবির সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলো সামনে আনছে। পাশাপাশি, কর্মী সম্মেলন- সাংগঠনিক সভা এ সবও চলছে। অন্যদিকে, প্রস্তুতি সেরে রাখছে প্রশাসনও। লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে
ইতিমধ্যে জেলায় প্রশিক্ষণপর্ব শুরু হয়েছে। আগে সেক্টর অফিসারদের নিয়ে এক বৈঠক হয়। আইসি-ওসি-এসডিও-বিডিওদের নিয়ে বৈঠক হয়। পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতেই এই বৈঠকের আয়োজন। এ বার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির হল। আগামী দিনে বিএলওদের (বুথ লেভেল অফিসার) পাশাপাশি প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্টদের নিয়েও শিবির হবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এ বার প্রশিক্ষণে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। ভোটকর্মীদের ছোট-ছোট দলে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভাবনাচিন্তা রয়েছে।”
সোমবারের শিবিরে উপস্থিত বিজেপির মেদিনীপুর শহর সভাপতি অরূপ দাস বলেন, “এর ফলে ধোঁয়াশাগুলো দূর হবে। ভোটকর্মীদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিও কমবে।”