সাইকেল বিলি করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই সাইকেল হাতে হাজির জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। সোমবার শালবনির গোদাপিয়াশালে প্রশাসনিক সভায়।
না, অন্য দিনের মতো কড়া ভাষায় প্রশাসনিক কর্তাদের ‘আক্রমণ’ করেননি। বরং প্রশাসনের সঙ্গে ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটিয়ে দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণে জোর দিলেন। তা-ও আবার উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে।
মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন আচরণে আপ্লুত প্রশাসনিক কর্তারা।
কী হল বৈঠকে? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একশো দিনের কাজ থেকে শুরু করে আবাসন প্রকল্প, সেতু নির্মাণ, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল তৈরি প্রতিটি বিষয়ের অগ্রগতি খুঁটিয়ে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাতে দেখা যায়, কোনও ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে তো কোনও ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ কাজ হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কাজ আটকে থেকে গিয়েছে প্রশাসনের সঙ্গে বিধায়ক বা ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে।
যেমন শালবনির কয়মাতে স্টেডিয়াম তৈরিতে উদ্যোগী হয় সরকার। কিন্তু দু’বছর অতিক্রান্ত হলেও কাজ তেমনি এগোয়নি। কেন? স্টেডিয়ামের জমিতে এখনও একজনের বাড়ি থেকে গিয়েছে। কেন তাঁকে বুঝিয়ে তুলতে পারেননি স্থানীয় বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। মুখ্যমন্ত্রীর মৃদু ধমক, “প্রকল্প চাওয়ার সময় যত তাগিদ দেখা যায়, তা বাস্তবায়িত করতে তেমন তাগিদ থাকে না কেন?” একই ভাবে সুবর্ণরেখা নদীতে ভসরাঘাট সেতুর জন্য নয়াগ্রামের দিকে সংযোগকারী রাস্তার ক্ষেত্রেও জমি নিয়ে সমস্যা। সেখানকার বিধায়ক দুলাল মুর্ম্মুই বা কেন সমস্যা সমাধান করে উঠতে পারছেন না। সেই প্রশ্নও ওঠে। দুলালবাবুকে মৃদু ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়ে দেন, “১৫ দিন সময় দিলাম। তারপরেও না কাজ হলে জেলাশাসক ব্যবস্থা নেবেন। আর তোমাদের দেখতে হবে না!”
এ দিন এলাকারই একটি সিমেন্ট কারখানারও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পশ্চিম মেদিনীপুরে এক লক্ষ ছাত্রীকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়েছে ৮৮ হাজার। জেলায় ৮টি আইটিআই হওয়ার কথা। এখনও পর্যন্ত ২টির কাজ শেষ হয়েছে। ডিজিট্যাল রেশন কার্ডের কাজ ৫০ শতাংশও এগোয়নি। জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে একশো দিনের প্রকল্পে ইএফএমএসের সুবিধে রয়েছে মাত্র ১২টি ব্লকে। এই তথ্য দেখে, সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে অসন্তোষ গোপনও করলেন না তিনি। বুঝিয়ে দিলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সব প্রকল্পের কাজ করতে হবে। নীচুতলায় যোগাযোগ রেখেই সেই কাজ এগোতে হবে।
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, আলোচনার গোড়ার দিকেই উঠে আসে একশো দিনের কাজের প্রসঙ্গ। কেন্দ্র চাইছে, সব ব্লকে ইএফএমএস (ইলেকট্রনিক ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) চালু হোক। এর ফলে, মজুরির টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই জমা পড়বে। দেখা যায়, জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে ১৭টি ব্লকেই এই সুবিধে নেই। মুখ্যমন্ত্রী দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগোনোর নির্দেশ দেন। অন্য দিকে, পথচলতি মানুষের সুবিধের জন্যে মেদিনীপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পাথওয়ে তৈরির নির্দেশ দেন তিনি।
সাহায্য নিতে মঞ্চে উঠে স্বপ্নের নায়কের মুখোমুখি এক ছাত্রী।
এই সব আলোচনার মাঝেই জেলা সভাধিপতি উত্তর সিংহ জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক কৌশিক নন্দী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না বলে অভিযোগ করেন। এমনকি পিংলা, জামবনি, নারায়ণগড়, ডেবরা-সহ কয়েক’টি ব্লক সম্বন্ধে অভিযোগ তোলেন যে, ওই ব্লকের বিডিও-রা ঠিক মতো জেলা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। সমন্বয় না থাকায় সমস্যা বাড়ে। মুখ্যমন্ত্রী আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য দু’পক্ষকেই জানান। পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তা অভিযোগ করেন, কিছু দুষ্কৃতী বেআইনি ভাবে গাছ কেটে নেয়। কিন্তু বন দফতর ব্যবস্থা নেয় না। এ ব্যাপারে ডিএফওকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। থানার ওসি-আইসিদেরও জানান, তাঁরা যাতে আরও সংবেদনশীল হন।
এক কথায়, পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনের সঙ্গে একটা সমন্বয়ও গড়ার চেষ্টা করা হয় এ দিন। তবে সব কিছুই হয়েছে অতি সাধারণ ভাবে। মুখ্যমন্ত্রীও বৈঠক থেকে বেরিয়ে বলেন, “সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। কয়েক’টি ক্ষেত্রে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।”
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
(তথ্য সহায়তা: বরুণ দে)