দেবের খুনসুটিতে খুশি সন্তোষ রাণার পরিবার

মঙ্গলবার বিকেল থেকেই আকাশের মুখ ছিল কালো। মেঘলা পরিবেশ ছিল মেদিনীপুরের বার্জটাউনে সিপিএম প্রার্থী সন্তোষ রাণার বাড়িতেও। কিছুক্ষণ আগেই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী ওরফে দেবের মেসেজটা পেয়েছেন সন্তোষবাবু। কথা দিনেও এ দিন সময়ের অভাবে চা খেতে আসতে না পারার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন বাংলা সিনেমার সেই নায়ক। অথচ সকাল থেকে তো তারই আপ্যায়ণের জন্য এত ব্যবস্থা। আর শেষে তিনি আসছেনই না। তারই ফল এই মন ভার করা পরিবেশ।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০১:৪৪
Share:

দেবের ছবি দেখতে ব্যস্ত অভিষেক। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

মঙ্গলবার বিকেল থেকেই আকাশের মুখ ছিল কালো। মেঘলা পরিবেশ ছিল মেদিনীপুরের বার্জটাউনে সিপিএম প্রার্থী সন্তোষ রাণার বাড়িতেও। কিছুক্ষণ আগেই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী ওরফে দেবের মেসেজটা পেয়েছেন সন্তোষবাবু। কথা দিনেও এ দিন সময়ের অভাবে চা খেতে আসতে না পারার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন বাংলা সিনেমার সেই নায়ক। অথচ সকাল থেকে তো তারই আপ্যায়ণের জন্য এত ব্যবস্থা। আর শেষে তিনি আসছেনই না। তারই ফল এই মন ভার করা পরিবেশ।

Advertisement

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সওয়া দশটা। ফের সন্তোষবাবুর ফোনে এল দেবের নম্বর থেকে ফোন। ‘দাদা, বৌদিকে একটু ফোনটা দিন তো!’ সন্তোষবাবুর স্ত্রী ভারতীদেবী ফোন ধরতেই ওপার থেকে গলা, ‘বৌদি, দরজা খুলুন। আমি আসছি।’ সত্যি শুনছেন তো, প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না ভারতীদেবীর। অপেক্ষা তাহলে শেষ হল? না কি এটাও নিছক কথার কথা? ভুলটা ভাঙল কিছু সময়ের মধ্যেই। বাড়িতে এলেন দেব। আর তার পরের চল্লিশ মিনিট কেটে গেল যেন কোথা দিয়ে। বুধবার সকালেও যে সেই ঘোর কাটেনি তা ধরা পড়ছিল ভারতীদেবীর কথাতেই। ভারতীদেবী বলছিলেন, “জানতাম দেব আসবে। কিন্তু, এ ভাবে যে আসবে ভাবতে পারিনি।”

সন্তোষবাবুর পরিবার সূত্রে খবর, রাতের চা-চক্রে রাজনীতির কথা খুব কমই হয়েছে। বরং হয়েছে অন্য অনেক গল্প। রাণা-পরিবারের সদস্যদের কথা, দেবের সিনেমার কথা, সুপারস্টারের ছোটবেলার কথা। সন্তোষবাবুর ছেলে অভিষেক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কাল, শুক্রবার তাঁর পরীক্ষাও রয়েছে। বুধবার অভিষেক বলছিল, “বাড়িতে এসেই আমাদের সকলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে দেবদা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছি শুনে পরীক্ষা কেমন হয়েছে তাও জানতে চেয়েছে।” মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের এই ছাত্রের কথায়, “দেবদা জানতে চেয়েছিল, আমি ওঁর সিনেমা দেখি কি না। আমি বলি, শুধু আমি কেন? আমার বন্ধুরাও তোমার ফ্যান।”

Advertisement

সন্তোষবাবু ঘাটালের সিপিআই প্রার্থী। অন্য দিকে, দেব ওই কেন্দ্রেরই তৃণমূল প্রার্থী। মঙ্গলবার রাতে ঘাটালের বাম প্রার্থীর বাড়িতে যে রাজনৈতিক সৌজন্যের ছবিটা ধরা পড়েছে, তার ক্যানভাস আঁকা শুরু হয়েছিল দেবের হাত ধরেই। টলিউডের সুপারস্টারই গোড়ায় জানান, সময় পেলেই তিনি সন্তোষবাবুর বাড়িতে চা খেতে যাবেন। প্রত্যুত্তরে ঘাটালের বাম প্রার্থীও জানান, মোস্ট ওয়েলকাম। ব্যস্। এরপরই ছবিটা রঙিন হতে থাকে। রবিবার সন্ধ্যায় সন্তোষবাবুকে ফোনে দেব জানান মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ মেদিনীপুরে আসবেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে শু্যটিংয়ের ব্যস্ততায় চা খেতে যাওয়া বাতিল করেন দেব। দেব আসছেন জেনে মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাণা-পরিবারে সাজো-সাজো রব পড়ে গিয়েছিল। বিকেলের ফোন-এসএমএসের পর বাম প্রার্থীর পরিবারের সকলে যখন ধরেই নিয়েছেন, দেব আজকে আসছেন না তখন আসে অপ্রত্যাশিত এই চমক।

দেব সঙ্গে এনেছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকেও। ভারতীদেবী বলছিলেন, “রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। ব্যক্তি দেব আমাদের সকলেরই পছন্দের। চা খেল। রান্নার প্রশংসাও করল।” টলিউডের সুপারস্টার না তৃণমূল প্রার্থী? দেবকে দেখে সবকিছু যেন চেনাছকে ভাবতেই পারছেন না অনেকে। তাই তারকা দেব কখন যেন অভিষেকের ‘দেবদা’ হয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement