খড়্গপুরে মুকুল রায়।
গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মাত্র একটি বিধানসভা কেন্দ্র খড়্গপুর সদরে ‘লিড’ পেয়েছে বিজেপি। আর তা যে তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে, তারই ইঙ্গিত মিলল রবিবার। দুই মেদিনীপুরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে সাংগঠনিক সভা ২৪ নভেম্বর মেদিনীপুরে হওয়ার কথা ছিল, ১৯ ডিসেম্বর তা খড়্গপুরে হবে বলে এ দিন জানিয়ে গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। দলের খড়্গপুর শহর কমিটির কার্যালয়ে এ দিন মমতার কর্মসূচির প্রস্তুতি বৈঠকও করেন মুকুলবাবু। সভার জন্য ঘুরে দেখেন মাঠ। পরে তিনি বলেন, “খড়্গপুরে ১৯ ডিসেম্বর দুই জেলার বুথস্তরের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক হবে বলে আপাতত স্থির রয়েছে। নেত্রী থাকবেন। সেই কর্মসূচি নিয়েই দু’চারটি কথা হল।”
আগামী বছর খড়্গপুরে পুরভোট। তার আগে নানা ভাষাভাষির এই শহরে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত নেতাদের যথেষ্ট উদ্বেগে রেখেছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। যদিও এই পরিস্থিতিতেও গোষ্ঠী কোন্দল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না তারা। খড়্গপুরে বিরোধ মূলত শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর সঙ্গে প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা জেলা কোর কমিটির সদস্য জওহরলাল পালের। এই সঙ্কট কাটাতেই দলনেত্রী সাংগঠনিক সভার জন্য খড়্গপুরকে বেছেছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
এ দিন মুকুল রায়ের বৈঠক ঘিরেও অবশ্য প্রকাশ্যে চলে আসে দুই গোষ্ঠীর কোন্দল। এ দিন শহর কমিটির কার্যালয়ে মুকুলবাবুর নেতৃত্বে মিনিট দশেকের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ছিলেন না জহরলালবাবু ও তাঁর অনুগামীরা। তবে দেবাশিস ছিলেন। ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, প্রদ্যোত্ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক অজিত মাইতি। দলীয় সূত্রে খবর, মমতার সাংগঠনিক সভার দিন ৫০ হাজার নেতা-কর্মীর বসার জায়গা করতে হবে বলে এ দিনের বৈঠকে জানানো হয়। বৈঠকে শহরের অন্যতম নেতা জহরলালবাবু কেন নেই তা জানতেও চান মুকুলবাবু। তখন এক কার্যকরী সভাপতি জানান, তিনি নিজে জহরলালবাবুকে ফোন করে আসতে বলেছিলেন। মুকুলবাবু সকলকে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে কিছুটা আক্ষেপের সুরেই বলেন, “একটি বাবার এক ছেলে থাকবে, অন্য ছেলে থাকবে না, এটাও ব্যর্থতা।” সাংবাদিকদের সামনে অবশ্য জহরলালবাবুর নাম না করে তিনি বলেন, “আজ তো রাজনৈতিক সভা নয়। সবাইকে এখানে ডাকিনি। কেউ কোনও কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন।”
মমতার সভাস্থল বাছতে এ দিন প্রথমে দেবাশিস ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে বিএনআর ময়দানে যান মুকুলবাবু। পরে তিনি ট্রাফিক রিক্রিয়েশন ময়দানও ঘুরে দেখেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে জহরলালবাবুর দেখা হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, খড়্গপুর শহর ছাড়ার পরে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি হোটেলে জহরলালের সঙ্গেও মুকুলবাবুর কিছুক্ষণ আলোচনাও হয়। মুকুলবাবু একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দেন।
মমতার সভার প্রস্তুতিতে আগামী দিনে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও আসবেন বলে এ দিন জানিয়ে গিয়েছেন মুকুলবাবু। তবে সারদা ও সিবিআই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।