সংঘর্ষে আহত এক ছাত্র। বৃহস্পতিবার মহারাজা নন্দকুমার কলেজে।
কলেজে প্রথম দিন পা রেখেই শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের (টিএমসিপি) দুই গোষ্ঠীর মারপিট দেখলেন নবাগত পড়ুয়ারা। বেগতিক দেখে কলেজ ছুটি দিতে বাধ্য হলেন কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের মহারাজা নন্দকুমার কলেজের এই ঘটনা ফের এ রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।
ঘটনাচক্রে এ দিন মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেও স্নাতকোত্তরে ভর্তির ফর্ম-ফিলাপ প্রক্রিয়ায় রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে।
নন্দকুমার কলেজ সূত্রে খবর, এ দিন প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর আগে নবাগত শ’পাঁচেক পড়ুয়াকে নিয়ে এক অনুষ্ঠান করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদ। তারপরে শুরু হয় ক্লাস। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রথম বর্ষের ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাস, সভাপতি উত্তম ভক্তা-সহ জনাকয়েক পদাধিকারী ছাপানো রুটিন বিলি করছিলেন। রুটিনের উল্টো পিঠে নানা দাবি-দাওয়ার সঙ্গে ছাপা ছিল সংগঠনের কলেজ শাখার সভাপতি তাপস দাসের নাম।
তাপস কলেজের ছাত্র নন, তা হলে কেন ছাত্র সংসদের তরফে বিলি করা রুটিনে তাঁর নাম থাকবেএই প্রশ্ন তুলে সংসদেরই একাংশ প্রতিবাদ জানান। ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সহ-সম্পাদক শেখ সাদ্দাম হোসেন, সহ-সভাপতি সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা ছিলেন প্রতিবাদী-শিবিরে। এর জেরে কলেজ চত্বরেই টিএমসিপি-র দু’পক্ষের হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ এলেও সংঘর্ষ থামেনি। দু’পক্ষের জনা ছয়েক জখম হন।
এর পরই কলেজ ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। কলেজের টিচার-ইন-চার্জ প্রদ্যোৎকুমার দাস বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তবেই ক্লাস শুরু করা হবে।” পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানান, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ওই কলেজে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
নন্দকুমারের এই কলেজে ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বহু দিন ধরেই টিএমসিপির গোষ্ঠী-কোন্দল রয়েছে। এক দিকে রয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা কলেজ পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সুকুমার দে-র অনুগামীরা। অন্য পক্ষে নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার বেরার গোষ্ঠী। টিএমসিপি সূত্রের খবর, এ দিন ক্লাসে ক্লাসে যাঁরা রুটিন বিলি করছিলেন ছাত্র সংসদের সেই পদাধিকারীরা বিধায়কের অনুগামী বলে দলে পরিচিত। তাপস দাসও বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ। কলেজ সূত্রের খবর, বিধায়ক-অনুগামীরাই এ বার কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ফলে, সুকুমার বেরার অনুগামীরা ক্ষুব্ধই ছিলেন। এ দিন রুটিনেও তাপসের নাম দেখে তাঁরা আরও খেপে যান।
সাদ্দামের অভিযোগ, “তাপসের নেতৃত্বে এক দল বহিরাগত আমাদের উপরে হামলা চালায়।” সুকুমার বেরার দাবি, “বহিরাগতদের দিয়ে নন্দকুমার কলেজ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার দে বলেন, “রুটিন বিলিতে যারা বাধা দিয়েছিল, তারাই বহিরাগত।” তাপসের বক্তব্য, “আমাকে সংগঠনের তরফে কলেজের টিএমসিপি শাখা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই রুটিনে আমার নাম ছিল। আমরাই এ দিন আক্রান্ত।”
এ ধরনের গোষ্ঠী-কোন্দল টিএমসিপি-র ভাবমূর্তির ক্ষতি করে দিচ্ছে না কি? জবাব দেননি তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। আর ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ শব্দটি শুনেই ফোন কেটে দিয়েছেন টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা।
টিএমসিপি-র এই গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের। তাঁদের কথায়, “কলেজে প্রথম দিনেই এমন কিছু দেখতে হবে ভাবিনি!”