শহরের বাসিন্দাদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র
পানীয় জলের দাবিতে মঙ্গলবার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরের মির্জাবাজার কুমোর পাড়ার বাসিন্দারা। আর বুধবার, একই দাবিতে পুরসভায় জলের দায়িত্বে থাকা পুর পারিষদ মৌ রায়কে স্মারকলিপি দিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফি বছরই গ্রীষ্মকালে তীব্র জল সঙ্কট দেখা দেয় মেদিনীপুর শহরে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না। ইতিমধ্যেই শহরের দু’তিনটি জায়গায় মাঝে-মধ্যেই পানীয় জল মিলছে না বলে অভিযোগ উঠছে। জল নিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষ কী বলছেন। পুর পারিষদ মৌ রায়ের দাবি, “শহরে কোথাও জলের সঙ্কট দেখা দেবে এমন পরিস্থিতি নেই। দু’একটি ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা নিতান্তই স্থানীয় সমস্যা থেকে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনাও না ঘটে সে জন্য আরও বেশি নজরদারি চালবে।”
মেদিনীপুর শহরে জল সঙ্কট মেটাতে বহু বছর আগে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছিল। যদিও মাস্টার প্ল্যানের কাজ এখনও শেষ হয়নি। কোথাও দু’একটি জলাধার তৈরি করে, কোথাও কিছুটা পাইপ লাইন বানিয়ে মাস্টার প্ল্যানের কাজ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা দিয়ে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার পানীয় জলের সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, কোথাও পানীয় জলের প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি উঠলেই পুর-কর্তৃপক্ষ সেখানে গভীর নলকূপ খুঁড়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। কিন্তু এ ভাবে আদৌ জল সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। কারণ, যত বেশি গভীর নলকূপ তৈরি করা ততই ভু-গর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাবে।
আড়ে বহরে ক্রমে বাড়ছে মেদিনীপুর শহর। গড়ে উঠছে নতুন বসতি। সেই সব এলাকাতেও পানীয় জল সরবরাহের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সব জায়গায় এখনও জলের পাইপ লাইন তৈরি করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ। ফলে ভবিষ্যতে যে আরও অনেক বেশি জলের প্রয়োজন রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সব বিষয়েই তাঁদের যেমন নজর রয়েছে তেমনি নতুন করে পরিকল্পনা তৈরির উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। অদুর ভবিষ্যতে যাতে পানীয় জলের সমস্যা একেবারেই না থাকে সে জন্য বেশ কয়েকটি পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে পুর পারিষদ জানিয়েছেন। তার মধ্যে প্রধান হল, আগে প্রচুর পরিমানে জলের অপচয় হত। দীর্ঘক্ষণ পাম্প চালিয়ে চলে যেতেন কর্মীরা। আবার কিছু ক্ষেত্রে জলাধার ভর্তি হওয়ার আগেই পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হত বলে অভিযোগ। কিন্তু বর্তমানে পাম্প চালানো ও জলাধার দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের হাতে মোবাইল দেওয়া হয়েছে। জলাধার ভর্তি হয়েছে জানানোর পরেই বন্ধ করা হচ্ছে পাম্প। কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কিনা দেখার জন্য পুর পারিষদ নিজেও মাঝে মধ্যে চলে যাচ্ছেন পাম্প হাউসে ও জলাধারের কাছে। তার বাইরে কোথাও সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যাতে পুর পারিষদকে দ্রুত সেই খবর জানান সেই আবেদনও জানিয়েছেন। পুর পারিষদের কথায়, “আমাদের কাজের মধ্যে কোথাও যাতে সমন্বয়ের অভাব না থাকে সে জন্য কাউন্সিলরদেরও এ ব্যাপারে আরও বেশি করে নজর দেওয়ার কথা জানিয়েছি। সকলে মিলে কাজ করলে আশা করা যায়, প্রখর গ্রীষ্মেও শহরবাসীকে তীব্র জল সঙ্কটে পড়তে হবে না।