জঙ্গলমহলে মাওবাদী অশান্তিপর্বের সময়ে বিপুল অঙ্কের বকেয়া বিদ্যুতের বিল থেকে রেহাই পাচ্ছেন ঝাড়গ্রামের গ্রামাঞ্চলের পারিবারিক (ডোমেস্টিক) বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৬টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮২৮ জন গ্রামীণ গ্রাহকের বকেয়া বিলের ২০ কোটি ২২ লক্ষ টাকা মুলতুবি (লক) করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা। এর ফলে, বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের অন্তর্গত ঝাড়গ্রাম, মানিকপাড়া, জামবনি, গোপীবল্লভপুর, বিনপুর ও বেলপাহাড়ি - এই ৬টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের গ্রামীণ গ্রাহকরা (ডোমেস্টিক) ওই বিদ্যুৎ বিলের বোঝা থেকে রেহাই পেলেন।
বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ঝাড়গ্রামের ডিভিশনাল ম্যানেজার উজ্জ্বল রায় বলেন, “ওই সব গ্রাহকদের ২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বকেয়া বিল আপাতত মেটাতে হবে না। কেবলমাত্র ২০১৪ সালের অগস্ট থেকে বকেয়া বিল গ্রাহকদের মেটাতে হবে। সেই মত বকেয়া ও বর্তমান বিল যোগ করে গ্রাহকদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। গ্রাহকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে শিবির করেও বিল জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, জঙ্গলমহলে মাওবাদী অশান্তির সময়ে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া এলাকায় মিটার রিডিং নিতে গিয়ে খুন হন বিদ্যুৎ দফতরের এক অস্থায়ী কর্মী। ২০০৮-২০১১ সালের ওই অশান্তি পর্বে জঙ্গলমহলের অনেক গ্রামেই মিটার রিডিং নেওয়া সম্ভব হয়নি। যার ফলে, গ্রাহকদের কাছে সময় মতো বিল পাঠানোও যায় নি। রাজ্যে পালা বদলের পরে ২০১৪ সালের গোড়ায় গ্রাহকদের কাছে বকেয়া বিদ্যুতের বিল পাঠানো শুরু হয়। কিন্তু বিপুল অঙ্কের বিল হাতে পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন গ্রাহকরা। ওই সব বিল মকুবের দাবিতে সোচ্চার হয় সারা বাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতি। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে লাগাতার স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি, সভা-মিছিল করে গ্রাহকদের ওই সংগঠনটি। বকেয়া বিল না মেটানোয় কয়েকশো গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ দফতর। বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতির আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে বাদবাকি লক্ষাধিক গ্রাহকের সংযোগ অবশ্য বিচ্ছিন্ন করা হয় নি।
বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ঝাড়গ্রামের ডিভিশনাল ম্যানেজার উজ্জ্বল রায় বলেন, “গ্রাহকদের সমস্যার বিষয়টি চলতি বছরের গোড়ায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। ২০০৮ নভেম্বর থেকে ২০১৪ জুলাই পর্যন্ত গ্রামীণ ‘ডোমেস্টিক’ গ্রাহকদের বকেয়া বিল ‘লক’ করে দেওয়ার জন্য আমরা রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার চেয়ারম্যানের কাছে প্রস্তাব পাঠাই। সেই প্রস্তাব বিবেচনা করে চেয়ারম্যান সম্প্রতি ওই বকেয়া বিলের পরিমাণ ‘লক’ করে দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন।” উজ্জ্বলবাবু জানান, কেবলমাত্র ২০১৪ সালের অগস্ট থেকে বকেয়া বিদ্যুতের বিল গ্রাহকদের মেটাতে হবে। ওই সময়ের বকেয়া বিলের জন্য কোনও জরিমানা ধার্য করা হচ্ছে না। জঙ্গলমহলের ওই ৬টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে এসে গ্রাহকরা নিয়ম মাফিক অনলাইনে বিল জমা দিতে পারবেন। পাশাপাশি, গ্রাহকদের সুবিধার জন্য গ্রামাঞ্চলে শিবির করেও বিল জমা নেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ‘পাইলট প্রোজেক্ট’ হিসেবে কয়েক দিন আগে ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের অন্তর্গত চুবকা গ্রাম পঞ্চায়েতে এক দিনের শিবির করা হয়। মাত্র এক দিনেই সাড়ে তিনশো গ্রাহকের বকেয়া ও বর্তমান বিল বাবদ মোট ৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা আদায় হয়েছে।
বিপুল অঙ্কের বিলের বোঝা থেকে রেহাই পেয়ে খুশি গ্রাহকদের একাংশও। ঝাড়গ্রামের পাকুড়িয়াপাল গ্রামের গ্রাহক অশোক মান্নার ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকার বকেয়া বিল লক হওয়ায় শিবিরে তাঁকে জমা দিতে হয়েছে ১ হাজার টাকা। আবার চুবকার সমায় মাণ্ডির বকেয়া বিলের ১৩ হাজার ৭৫১ টাকা লক হয়ে যাওয়ায় তাঁকে বিল বাবদ মেটাতে হয়েছে মাত্র ৪৭০ টাকা। সমায় মাণ্ডির কথায়, “এত টাকার বিদ্যুতের বিল দেখে আমার মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল। কী করে টাকাটা দেব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। তবে বিদ্যুৎ দফতরের নয়া সিদ্ধান্তে অনেকটাই রেহাই পেলাম।” তবে গ্রাহকদের একাংশের বক্তব্য, ওই সময়ের বিদ্যুৎ বিল মকুব করে দিলে ভাল হত।
সারা বাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য তপন রায় বলেন, “এটা গ্রাহকদের আন্দোলনের জয়। এতে গ্রাহকদের কিছুটা সুরাহা হবে। তবে ২০১৪ সালের অগস্ট থেকে বকেয়া বিলেও বিস্তর ভুল-ত্রুটি রয়েছে। ওই সব বিল সংশোধনের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মহলে স্মারকলিপি দেব।”