বহিষ্কৃতেরা দীর্ঘ দিন পার্টিতে ছিলেন। ফলে তাঁদের কোনও কমরেডের প্রতি দুর্বলতা থাকতেই পারে।
শরিকি বিবাদে যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়েছে। মুখ দেখাদেখিও নেই। শুধু আছে একের প্রতি অন্যের অসন্তোষ, দোষারোপ!
তবু দীর্ঘ দিন একত্রে বসবাসের জেরে কোথাও যেন একটু ‘টান’ অবশেষ রয়েছে। সকলেই আড় চোখে মাপছেন অন্যকে! তার নিট ফল, পূর্ব মেদিনীপুরের ২২ তম জেলা সম্মেলনে সশরীরে না থেকেও থেকে গিয়েছেন জেলা সিপিএমের এক সময়ের কাণ্ডারী লক্ষ্মণ শেঠ।
লক্ষ্মণ শেঠের অনুগামীরা নজরে রাখছেন ঠিক কী হচ্ছে জেলা সম্মেলনে। তেমনি ভাবেই সিপিএমের বর্তমান নেতৃত্বও জরিপ করছেন কী করছেন বহিষ্কৃত নেতারা। সম্মেলন শুরু দিনেই সাংবাদিকদের কাছে লক্ষ্মণ ঘনিষ্ঠ নেতা অমিয় সাহু-র প্রশ্ন ছিল, “দাদা, আজাদ হিন্দ ময়দানে কত লোক হয়েছে?” নন্দীগ্রামের এক নেতা না কি দলে ফিরতে চেয়ে দরবারও শুরু করেছেন, ঘনিষ্ঠ মহলে তা কবুল করেন সিপিএমের প্রভাবশালী এক জেলা নেতা।
লক্ষ্মণ-ক্ষত যে এখনও টাটকা, তার প্রমাণ মিলেছে সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনেও। সেখানে উঠে এসেছে লক্ষ্মণ ও তাঁর অনুগামীদের বহিষ্কারের প্রসঙ্গ। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে এই বলে, ‘বহিষ্কৃতেরা দীর্ঘ দিন পার্টিতে ছিলেন। ফলে তাঁদের প্রতি কোনও কমরেডের দুর্বলতা থাকতে পারে। কেউ গোপনে বা জেলা পার্টির অজান্তে চেষ্টা করতে পারেন...’। এরপরই প্রাসঙ্গিক ভাবে তুলে আনা হয়েছে কাকাবাবুর সেই উক্তি, ‘বন্ধুর চেয়ে পার্টি বড়।’
তা শুনে জেলা সিপিএমের এক নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, লক্ষ্মণ শেঠ যখন দল ছাড়লেন তখন দলের নেত্রী তথা লক্ষ্মণবাবুর স্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, ‘স্বামীর চেয়ে পার্টি বড়।’ কিন্তু, কিছু দিন পরই দল ছেড়ে নিজের কথাকেই ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তমালিকাদেবী। এরপরই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বন্ধু না পার্টি, কখন কে বড় হবে তা বলে সময় আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি।”
তবে লক্ষ্মণ শিবিরের প্রতি ক্ষমতাসীন সিপিএমের একটা বড় অংশের প্রভূত ক্ষোভ এখনও থেকে গিয়েছে। সোমবার জোনাল কমিটির রিপোর্টিংয়ের সময় এগরা জোনালের নেতৃত্ব প্রশ্ন তোলেন, ‘দলবিরোধী কাজের জন্য লক্ষ্মণবাবুদের বিরুদ্ধে এত দেরিতে ব্যবস্থা নেওয়া হল কেন? রাজ্যপার্টি আগে এ সব জানতো না? না কি, জেনেও চুপ করেছিল?’
নন্দীগ্রাম, খেজুরির নেতাকর্মীরা এখনও ঘরছাড়া রয়েছেন, এই তথ্য উঠে আসে সম্মেলনে। এলাকার নেতারা অভিযোগ করেন, ‘দল যখন রাজ্যে ক্ষমতাসীন, তখনও সে ভাবে ঘরছাড়াদের পাশে দল দাঁড়ায়নি। এখনও খেজুরি, নন্দীগ্রামের বহু নেতাকর্মী ঘরছাড়া। প্রয়োজনীয় সাহায্যটুকুও পাচ্ছেন না!’ বিজেপি শিবিরের দিকে বাম পরিবারের তরুণরা ঝুঁকছেন, তা নির্দিষ্ট ভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে। কেন এমনটা হচ্ছে? জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের পর্যবেক্ষণ, তৃণমূলকে ঠেকাতেই এই ঝোঁক বাড়ছে।
রবিবার থেকে শুরু হওয়া সম্মেলন শেষ হবে আজ। আলিমুদ্দিনের বিশেষ নজরদারিতে চলছে পূর্বের এই সম্মেলন। সম্মেলনে শেষ দিনে রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে দলের জেলা নেতৃত্বে কোনও বদল আনা হয় কি না, বা কোনও বিশেষ সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয় কি না দেখার সেটাই।
সূত্র: সিপিএমের সম্পাদকীয় প্রতিবেদন