মেদিনীপুরের চেনা জল-ছবি। —ফাইল চিত্র।
গরম পড়তে না পড়তেই পানীয় জলের হাহাকার দেখা দিয়েছে মেদিনীপুর শহরে। শহরের একাধিক জায়গায় পানীয় জলের অভাবে সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জল-সঙ্কট বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। অবিলম্বে ওই সব এলাকায় নলকূপ বসিয়ে জল সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন সকলেই। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে পুরসভাকে জানিয়েছে, দ্রুত জলের ব্যবস্থা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একাংশকে পানীয় জল সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পরীক্ষারগুলিও।
কিন্তু নির্বাচন বিধি লাগু হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে পুরসভা। পুরসভার পক্ষ থেকে নতুন করে কাজ করা এখন সম্ভব নয়। তা হলে কি পানীয় জলের সঙ্কট মিটবে না? এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে পুরসভার পক্ষ থেকে প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পুরসভার জল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর মৌ রায় বলেন, “নিবার্চনী বিধি লাগু হওয়ায় আমরা সরাসরি কিছু করতে পারছি না। তাই প্রশাসনকে জানিয়েছি, যাতে পানীয় জলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। আমাদের কাছে নলকূপ তৈরির অর্থও রয়েছে। শুধু নির্বাচন কমিশনের অনুমতি পেলেই তা করতে পারব।” এখন প্রশ্ন পুরসভার পক্ষ থেকে কেন আগে পদক্ষেপ করা হল না! কারণ, গ্রীষ্মকালে পানীয় জলের সঙ্কট পুরসভার অজানা নয়। নির্বাচন বিধির গেরোও তো জানা। তাহলে কেন আগে নলকূপ বসানোর কাজ শুরু করা হল না! এ বিষয়ে অবশ্য পুর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন ওয়ার্ডে নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই এত টালবাহানা চলে যে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আগেই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যায়।
ঠিক কোথায় কোথায় তীব্র জল সঙ্কট দেখা দিয়েছে?
শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালাপাড়া, অরবিন্দনগর, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হবিবপুর, নতুনপল্লি, সূর্যনগর, চাষিপাড়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবীনপল্লি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বিবেকানন্দ নগর-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ তীব্র জল-সঙ্কটে ভুগছেন। উত্তর বিবেকানন্দ নগরের বাসিন্দা নারায়ণ ঘোড়াই, বৃষকেতু দোলুইরা জানিয়েছেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় জলের পাইপ লাইন পর্যন্ত পাতা হয়নি। পরবর্তীকালে অনেক আবেদন-নিবেদনের পর পাইপ লাইন পাতা হলেও জল যাচ্ছে না। কারণ, ওখানে যে গভীর নলকূপ করার কথা ছিল, তা হয়নি। ফলে বহু দূর থেকে আমাদের জল আনতে হয়।” একই অভিযোগ নবীনপল্লির জয়া দে, আরতি জানাদের। তাঁদের কথায়, “কলে সরু সুতোর মতো জল পড়ে। তা-ও কিছু সময়ের জন্য। যা দিয়ে এলাকার জলের চাহিদা মেটে না। তাই এই এলাকায় একটি গভীর নলকূপ তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানানো হয়েছিল। পুরসভা আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু এখনও তা না করায় এ বারের গ্রীষ্মেও চরম কষ্টে পড়তে হবে।”
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাছাড়াও প্রতিটি বিভাগে পরীক্ষাগার রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ জল সরবরাহ হয় তাতে আর কুলোচ্ছে না। সঙ্কট মেটাতে একটি গভীর নলকূপ বসানোর দাবি জানিয়েছেন তিনিও। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জলের সঙ্কট স্বাভাবিক। কারণ, পুর-এলাকায় দিনে ২৪.৫০ মিলিয়ন লিটার জল প্রয়োজন হয়। কিন্তু পুরসভার যে পরিকাঠামো তা দিয়ে মাত্র ১৮.২ মিলিয়ন লিটার সরবরাহ করা যায়। সব থেকে আগে জল সরবরাহের ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। নতুবা সরবরাহ সম্ভব নয়। আর তা করতে হলে নলকূপ বসাতেই হবে। পুরসভা অবশ্য ১০টি গভীর নলকূপ বসানোর জন্য অর্থও পেয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কাজ শুরু করতে পারেনি। অভিযোগ, পুর-কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই তা সম্ভব হয়নি। গ্রীষ্ম পড়তেই জল-সঙ্কট দেখা দেওয়ায় টনক নড়েছে। নির্বাচন বিধি চালু হওয়ায় এবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে পুরসভা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পানীয় জলের ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি দেওয়া যায়। কিন্তু সব দিক খতিয়ে তা দিতে হয়। নির্বাচন বিধি লঙ্ঘিত হবে কিনা তা খতিয়ে দেখার পরেই অনুমোদন দেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।