মেঝের বিছানাই ভরসা হস্টেলে। নিজস্ব চিত্র।
রয়েছে মাত্র তিনটি ঘর, আর তাতেই গাদাগাদি করে মেঝেতে শুয়ে রাত কাটিয়ে দেয় মেয়েগুলো। যাদের ওই ঘরে জায়গা হয় না, তারা বেঞ্চ সরিয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে পড়াশোনা ও রাতে থাকার ব্যবস্থা করে নেয়।
কোনও বিশ্রামাগার বা পান্থশালা নয়, পটাশপুর-২ ব্লকের তাহালিয়া শোভাপুর বালিকা বিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকা মেয়েদের অবস্থা এমনই। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে তফসিলি পড়ুয়াদের জন্য ছাত্রীআবাস চালু হয়েছিল ২০০৯ সালে। স্কুলের তরফ থেকে জানা গিয়েছে, হস্টেলের জন্য নির্দিষ্ট তিনটি ঘরে খুব বেশি হলে থাকার কথা দশ জন করে তিরিশ জনের। অথচ সেখানে থাকতে বাধ্য হয় পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৪৫ ছাত্রী। হস্টেলে মাত্র তিনটি ঘর, অথচ এত জন থাকে কী ভাবে? স্কুল কর্তৃপক্ষের কথায়, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য নির্দিষ্ট এই হস্টেলে ১২৪ জনের থাকার অনুমতি আছে। আর বাকিরা খুবই গরিব ও দুঃস্থ পরিবারের। তাই স্কুল ওদের ছেড়ে দিলে পড়াটাই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়েই তাদের রাখতে হয়। কিন্তু তিনটি ঘরের পক্ষেও তো ১২৪ সংখ্যাটা যথেষ্ট বেশি। এতজনের থাকার এত কম ঘরে থাকা কত দিন চলতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই।
গোদের উপর বিষফোড়ার মতো বেশ কিছু দিন ধরে শুরু হয়েছে নতুন উপদ্রব। কেমন? রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে আওয়াজ, ঢিল ছোড়া, কারণে-অকারণে স্কুলের মধ্য দিয়ে রাতের বেলা যাতায়াত। এই পরিস্থিতিতে বোর্ডিংয়ে থাকা দশম শ্রেণির মেয়েরা জানাচ্ছে, তারা রাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দিন কয়েক আগেই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, স্কুলের ভিতরের তিন দিকই পুরোপুরি খোলা। নেই কোনও সীমানা প্রাচীর, যা রাতের বেলায় মেয়েদের ন্যূনতম সুরক্ষা দিতে পারে। আবাসিক পড়ুয়াদের কথায়, ‘রাতের বেলা হস্টেল লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। বিচিত্র সব আওয়াজ হয়। স্কুলের মধ্য দিয়ে অনেককেই হেঁটে যেতে দেখি। খুব ভয় করে।’’ তারা সকলে মিলে প্রতিকার চেয়ে দ্বারস্থ হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষেরও। তবে পরিস্থিতি বদলায়নি। কেন? ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা লক্ষ্মী অট্টের জবাব, স্কুলে পরিকাঠামো গত সমস্যা রয়েছে। তাই সমস্যা বুঝেও তাঁরা নিরুপায়। তিনি বলেন, “সব সমস্যার কথা পরিচালন সমিতির প্রধান মহকুমাশাসককে জানিয়েছি। আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।”
কী বলছে প্রশাসন? স্কুল পরিচালন কমিটির প্রধান মহকুমাশাসক অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, “মেয়েদের নিরাপত্তার সমস্যাটি নিজে দেখে এসেছি। ওরা সত্যিই খুব অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। তা ছাড়া স্কুলটির হস্টেলের জন্য আরও কিছু ঘরের প্রয়োজন রয়েছে। সব কিছু পূর্ব মেদিনীপুর জেলাস্তরে জানিয়েছি। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলাশসাককে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও কোনও ব্যবস্থা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “ইতিমধ্যেই চারিদিকে সীমানা প্রাচীরের প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, বাবু জগজীবনরাম প্রকল্পে ওখানে একটি ছাত্রীনিবাস তৈরির চিন্তাভাবনাও চলছে।” তবে জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে এই নিয়ে লিখিতভাবে আমাকে কেউ জানায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”