শুধু দলের সাংগঠনিক সভা নয়, খড়্গপুরে এসে একটি সরকারি অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩০ ডিসেম্বর খড়্গপুর কলেজ মাঠে ওই প্রশাসনিক অনুষ্ঠান হবে। বৃহস্পতিবার সরকারি সেই সভাস্থল চূড়ান্ত করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে খড়্গপুরে এসেছিলেন জেলা পুলিশ ও প্রসাশনের কর্তারা। খড়্গপুর কলেজ মাঠ পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরাও। পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে ৩০ ডিসেম্বর খড়্গপুরে একটা প্রশাসনিক সভা হবে। তাই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একটি দলের সঙ্গে মাঠ দেখার পাশাপাশি আলোচনাও করা হয়েছে।”
জানা গিয়েছে, প্রশাসনিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে জেলার বিভিন্ন ব্লকের সরকারি সুবিধা প্রাপকদের পাট্টা, সাইকেল-সহ নানা জিনিস বিলি করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তুলে ধরবেন রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়নমুখী কর্মসূচির কথা। মাঠের কোথায় মঞ্চ হবে, কোথায় ঢোকা-বেরনোর পথ হবে, এ দিন এ সবই খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা। ঠিক হয়েছে, ওই দিন দুপুর দু’টোয় মুখ্যমন্ত্রী ওই সরকারি সভায় যোগ দেবেন। বিকেল তিনটে নাগাদ হেলিকপ্টারে ফিরে যাবেন তিনি। হেলিপ্যাডের জন্য এ দিন মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য মাতকাতপুরে একটি স্কুলের মাঠ দেখতে যান। তিনি বলেন, “আমি যতটুকু জানি মুখ্যমন্ত্রী সে দিন কলেজ ময়দানে সরকারি সুবিধা বিলির অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তারপরে হেলিকপ্টারে কলকাতা ফিরে যাবেন। তাই হেলিপ্যাডের জন্য মাতকাতপুরে মাঠ দেখা হল।”
সরকারি অনুষ্ঠানের আগে ৩০ ডিসেম্বর বেলা ১১টা নাগাদ রেলশহরের প্রবেশদ্বার চৌরঙ্গীর কাছে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে দলের সাংগঠনিক সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী। দুই মেদিনীপুরের একেবারে বুথস্তর থেকে জেলা পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের সেখানে উপস্থিত থাকার কথা। এই সাংগঠনিক সভা আগে মেদিনীপুরে হওয়ার কথা ছিল। পরে ঠিক হয় খড়্গপুরে ১৯ ডিসেম্বর সভা হবে। এরপর কর্মিসভার দিন বদলে ২০ ডিসেম্বর হয়। শেষে তা-ও বাতিল হয়। আপাতত ঠিক রয়েছে ৩০ ডিসেম্বর ওই সাংগঠনিক সভা হবে।
দলীয় এবং প্রশাসনিক, মুখ্যমন্ত্রীর দু’টি কর্মসূচির জন্যই কেন খড়্গপুর শহরকে বাছা হল, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গত লোকসভা ভোটের বিধানসভা ওয়াড়ি ফল অনুযায়ী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় একমাত্র খড়্গপুর সদর বিধানসভা এলাকায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। বিজেপির শক্তি ক্রমেই বাড়ছে। বুধবার খড়্গপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের উপস্থিতিতে শিখ সম্প্রদায়ের বহু মানুষ বিজেপিতে যোগ দেন। আগামী বছর আবার রেলশহরে পুরভোট। তার আগে এক দিকে যেমন বিজেপি ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, তেমনই তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলও দলীয় নেতৃত্বকে ভাবনায় রেখেছে। সব দিক বিচার-বিবেচনা করেই মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের জন্য খড়্গপুরকে বাছা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের মতে, “গোটা বাংলায় বিজেপি-ই মানুষের একমাত্র ভরসা। তাই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী। খড়্গপুরে নিজেদের গোষ্ঠী কোন্দল মিটিয়ে নিয়ে পুরসভায় ভাল ফল করতেই রেলশহরে নজর পড়েছে। কিন্তু তিনি সফল হবেন না।” যদিও তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “বিজেপি বাংলায় ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে স্বপ্ন দেখছে। ওঁদের দলে যাঁরা আছেন তাঁদের অধিকাংশই সিপিএমের দুর্নীতিগ্রস্ত লোক। তাঁদের দেখে মানুষ ভোট দেবেন না।”