খোকুড়দার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ঢুকছেন তদন্তকারী দলের প্রতিনিধিরা।
কলকাতায় রাজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে যখন সূর্যকান্ত মিশ্রের সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ছে, তখনও অন্য প্রান্তে তাঁর স্ত্রী-র স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় দুর্নীতির অভিযোগে তল্লাশি জারি রইল। গত দু’দিনের মতো সংস্থার অ্যাকাউন্টের তথ্য জোগারে এ দিন দিঘা, দাঁতনের মোগলমারিতে যান রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকেরা।
এ দিন সকাল দশটায় চার আধিকারিক প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুরের খাকুড়দায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও একটি সমবায় ব্যাঙ্কের শাখায় তদন্তে যান। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে ‘স্টেটমেন্ট’ তৈরি রাখতে বলে চলে যান বিদ্যাসাগর কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে। বৃহস্পতিবার তদন্তকারীরা এই ব্যাঙ্ক থেকেই ১৬টি অ্যাকাউন্টের বিশদে তথ্য পেয়েছিলেন। এ দিন তার প্রিন্ট আউট নেন। ম্যানেজারকে কিছু প্রশ্নও করেন। কী জানতে চাইলেন তদন্তকারীরা? এ ব্যাপারে ওই ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা কুলুপ এঁটেছেন।
তবে ব্যাঙ্ক থেকেই তদন্তকারীরা জানতে পারেন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কোষাধ্যক্ষ তথা এড্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের অন্যতম কর্তা (প্রোজেক্ট ডিরেক্টর) কার্তিকচন্দ্র আচার্যের একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে দাঁতনের মোগলমারি শাখার এক ব্যাঙ্কে। সঙ্গে সঙ্গে তদন্তকারীদের দু’জন রওনা হন মোগলমারিতে। সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, পেশায় শিক্ষক কার্তিকবাবুর এই ব্যাঙ্কে শুধু স্যালারি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার নিতাই ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ওই অ্যাকাউন্টে খুবই সামান্য টাকা রয়েছে। তদন্তকারীদের দু’জন খাকুড়দায় ফিরে এলে চার জনে সাড়ে তিনটে নাগাদ দিঘায় পৌঁছন।
দিঘায় কেন?
দিঘায় ওই ব্যাঙ্কেরই শাখায় চলছে তল্লাশি।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ২০০৮ সালে এড্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সমিতির একটি প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঊষা মিশ্রের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ভগবতীদেবী নারী কল্যাণ সমিতি’কে। দিঘা-শঙ্করপুর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীদের মধ্যে এড্স সচেতনতা বাড়ানো ছিল প্রকল্পের লক্ষ্য। দিঘায় সেই কাজ কেমন হয়েছে, এলাকায় ব্যাঙ্কে কোনও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল কি না সে সব জানতেই এখানে আসা। কী পেলেন? তদন্তকারীদের নেতৃত্বে থাকা ডিএসপি রণবীর মুখোপাধ্যায় শুধু বলেন, “দ্রুত সব তথ্য জোগার করে সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে।” এখনও অবধি পাওয়া তথ্যে বড়সড় দুর্নীতির প্রমাণ কিছু পেয়েছেন? উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। সাড়ে ছ’টা নাগাদ তাঁরা কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন।
তদন্তকারীদের একটি সূত্রে খবর, দিঘায় ঊষাদেবীর সংস্থার হয়ে জনা দশেক বেতনভুক কর্মী ছিলেন। স্থানীয় এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে একটি অ্যাকাউন্টেরও সন্ধান মিলেছে। ব্যাঙ্কের একটি সূত্রে খবর, ওই অ্যাকাউন্টটি সুদীপ মিশ্রের। তিনি দিঘার প্রকল্পের অন্যতম সঞ্চালক ছিলেন। সুদীপ নতুন রাজ্য সম্পাদকের আত্মীয়ও বটে। তবে ওই অ্যাকাউন্টের বিষয়ে বিশদে কিছু বলতে চাননি তাঁরা। তবে খুবই অল্প কিছু টাকা ছিল বলে ব্যাঙ্কের ওই সূত্রটির দাবি। ঊষাদেবীর সংস্থার এক কর্মীর দাবি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কোনও কর্মীরই পারিশ্রমিক বাবদ টাকা বাকি নেই।
এ দিনের তল্লাশি নিয়ে ঊষা মিশ্রের প্রতিক্রিয়া, “রাজনৈতিক উদ্দেশেই এই তল্লাশি হয়েছে। তাতে সূর্যকান্ত মিশ্রকে কলঙ্কিত করা যাবে না। তদন্তকে ভয় পাই না।” সূর্যকান্তবাবুর রাজ্য সম্পাদক হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, “আমরা কতটা স্বচ্ছ সেটা দল জানে। তাই ওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে ওর পরিশ্রম আরও বাড়ল।” বৃহস্পতিবার খাকুড়দায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কার্যালয়ে অনুমতি না নিয়ে নকল চাবি বানিয়ে আলমারি খুলে তদন্ত হওয়ায় এ দিনও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর দাবি, “ওই ঘটনায় তাঁর সংস্থার পক্ষ থেকে এ দিন পুলিশে অভিযোগ
দায়ের হয়েছে।” এ দিন তদন্তকারীরা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কোষাধ্যক্ষ তথা এড্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের অন্যতম কর্তা কার্তিকচন্দ্র আচার্যের অ্যাকাউন্টের খোঁজে মোগলমারি গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁর শ্বশুরবাড়িতেও হানা দেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে কার্তিকচন্দ্রবাবুকে ফোন করা হলে তাঁর স্ত্রী মিলি আচার্য অধিকারী ফোন ধরে বলেন, “তদন্তের নামে যে ভাবে স্যালারি অ্যাকাউন্টে খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে, সে অভদ্রতা।”
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ, সোহম গুহ।