সারদা-কাণ্ডে দল যখন বিড়ম্বনায়, তখন দলের সকলকে, বিশেষ করে নেতাদের স্বচ্ছ, সত্ থাকার পরামর্শ দিলেন বিধানসভার মুখ্য সচেতক তথা তৃণমূলের প্রবীণ শ্রমিক নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। শনিবার আইএনটিটিইউসি-র এক অনুষ্ঠানে মেদিনীপুরে এসেছিলেন শোভনদেববাবু। সেখানেই তিনি বলেন, “আমরা যাঁরা নেতৃত্বে আছি, আমাদের জীবনে স্বচ্ছতা যেন থাকে। মানুষ যেন আমাদের দিকে আঙুল তুলতে না পারে। প্রত্যেকে যেন বুঝতে পারে, এই মানুষটা সত্, স্বচ্ছ।”
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত জেলা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে নির্মিত শ্রমিক ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করতে এ দিন মেদিনীপুরে এসেছিলেন শোভনদেববাবু। সত্ থাকার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি নেতাদের যোগ্য হয়ে ওঠারও বার্তা দেন। শোভনদেববাবু এ দিন বলেন, “‘যে ফুলের মালা আমাদের দেওয়া হল খুব বেশি হলে তার ওজন কত হবে? দু’শো কিংবা আড়াইশো গ্রাম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ফুলের ওজন দু’শো কিলোগ্রাম। কারণ, মালা নিতে গেলে আমি প্রতি মুহূর্তে ভাবি আমি যাঁর দল করি, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি নিজে যেন সব সময় তাঁকে অনুকরণ করতে পারি। ফুলের মালা নেওয়ার জন্য যেন যোগ্যতা অর্জন করতে পারি।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে দলের সব ক’টি শ্রমিক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেও অবশ্য দ্বন্দ্ব কাটছে না। সম্প্রতি শিলিগুড়িতে তৃণমূলের শ্রমিক নেত্রী দোলা সেনের নেতৃত্বে আইএনটিটিইউসি-র এক সভার জেরে বিতর্কও দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে তিনি মমতার সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন শোভনদেববাবু।
শিলিগুড়ির প্রসঙ্গ টেনে শোভনদেববাবু এ দিন বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আমরা সবাই চাইছি, একটা কারখানায় দলের একটা সংগঠন থাকুক। মমতা প্রাণপণ পরিশ্রম করছেন শিল্প আনতে। সে ক্ষেত্রে সহায়ক শক্তি হিসেবে যদি আমাদের কাজ করতে হয়, তাহলে আমাদের নিজেদের উদ্যোগে এক জায়গায় একটা ইউনিট করে নিতে হবে। তাহলে শান্তি থাকবে।” এরপর দোলা সেনের নাম না করে শোভনদেববাবু বলেন, “কাগজে দেখলাম উনি (দোলা সেন) উত্তরবঙ্গে একটা মিটিং ডেকে দিয়েছেন। চা বাগানের ইউনিয়নটা আমার। আমিই সভাপতি। ওই মিটিংয়ে সুব্রত বক্সীও যাননি। আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলব, একটা ইউনিয়নই দরকার।”
এ দিন মেদিনীপুরেও ঐক্যের ডাক দেন শোভনদেববাবু। তাঁর কথায়, “আমাদের মধ্যে একটু ঐক্য চাই। আমার বিনীত নিবেদন, আপনারা (উপস্থিত শ্রমিকেরা) ঐক্যবদ্ধ থাকুন।” সভায় বিজেপি এবং সিবিআইয়ের কড়া সমালোচনা করেন তৃণমূলের প্রবীণ এই শ্রমিক নেতা। কুত্সার জবাব উন্নয়নের মাধ্যমে দেওয়ার বার্তা দেন।
সভায় ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায়, দুই কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী প্রমুখ। শোভনদেববাবু বলেন, “আজ এখানে সবাই একসঙ্গে আছি। এটা দেখেই খুব ভাল লাগছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে।”