রামনগরে জওয়ানকে হামলা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই মিটে গিয়েছে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন। আর ভোট মিটতেই এতদিনের প্রচারের ফসল কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত সব পক্ষই।
প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে সোমবার সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট মিটেছে। কাঁথিতে ভোট পড়েছে ৮৭.৩৬ শতাংশ। গত ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৯০.২৮ শতাংশ। অর্থাৎ এবার ভোট বেশ কিছুটা কমেছে। দেশ জুড়ে ভোটের ফল ঘোষণা হবে আগামী ১৬ মে। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজে। কিন্তু তার আগে হিসেব- পাল্টা হিসেব তো আর বন্ধ থাকতে পারে না। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকেই দলীয় কার্যালয়ে সব পক্ষই বসে গিয়েছে আলোচনায়।
জেতা নিয়ে শিশির অধিকারীর জয় নিয়ে একশো ভাগ নিশ্চিত দক্ষিণ কাঁথির তৃণমূল বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী। তিনি জানিয়েছেন, শিশিরবাবু শুধু জিতবেন না, গতবারের চেয়েও বেশী মার্জিনে জয়লাভ করবেন। গত বছর বাম জমানাতেও শিশিরবাবু কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই লিড পেয়ে লক্ষাধিক ভোটে জিতেছিলেন। এ বার সেই ব্যবধান দু’লক্ষ ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। উন্নয়েনর খতিয়ান তুলে ধরে তাঁর বক্তব্য, “গ্রামের কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে, ঘরে পানীয় জল আর বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। একশো দিনের কাজ করে মানুষের হাতে টাকা এসেছে। পড়ুয়ারা কন্যাশ্রীর সুযোগ পাচ্ছে, আরও পড়ার সুযোগ বাড়ছে। যুব সম্প্রদায় তাই মানুষ উন্নয়নের ধারাকে বজায় রাখার জন্যই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন।”
রাজনৈতিক মহলের দাবি, সন্ত্রাস কবলিত এলাকা বলে চিহ্নিত খেজুরিতে শান্তিতে যেভাবে লোকসভ নির্বাচন হল, তা নজিরবিহীন। চিরাচরিত বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট দেওয়া, বুথে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের বসতে না দেওয়া এমনকী কর্মীদের মারধরের তেমন কোনও অভিযোগ এবারের ভোটে খেজুরিতে নেই। কেবলমাত্র পরিচয়পত্র দেখাতে না চাওয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে রামনগরে। ঘটনায় গ্রেফতারও করা হয় এক যুবককে। প্রশাসনের তরফে শান্তিতে ভোটের কথা বলা হলেও বিরোধী পক্ষ অবশ্য সেই দাবি মানতে নারাজ। সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহ জানিয়েছেন, এ বারের ভোটে তৃণমূলের ব্যাপক সন্ত্রাস চোখে পড়েছে। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল যেভাবে সন্ত্রাস চালিয়েছে তা নিয়ে আর বলার কিছু নেই। তৃণমূলের ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে মানুষ যেভাবে ভোট দিতে পেরেছেন তাতে মানুষ বামপন্থীদেরই ভোট দিয়েছেন। আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত।”
ভোটের ফল নিয়ে তুমুল আলোচনা কংগ্রেস শিবিরেও। এলাকার কংগ্রেস প্রার্থী কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভোট কেমন হয়েছে তা সকলেই জানেন। বাইরে থেকে মনে হয়েছে আপাত শান্ত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ছাপ্পা ভোট, বুথ জ্যাম, বিরোধী সমর্থকদের ভয় দেখানো সবই করেছে শাসক দল। কিন্তু তারপরও মানুষ ভোট দিয়েছেন। এতেই আমি খুশি।” সারা দেশে যখন মোদী হাওয়া, তখন কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রই বা তার থেকে বাদ যায় কীভাবে? তাই জোর লড়াইয়ে রয়েছে বিজেপি প্রার্থী কমলেন্দু পাহাড়িও। তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “ভোটের আগের দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসানো হয়েছে বিরোধী সমর্থকদের। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ আমাদের পাশে থাকবেন বলে এগিয়ে এসে ভোট দিয়েছেন। রাজ্যে যেরকম সন্ত্রাস রয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে এর থেকে বেশি আর কী চাইতে পারি?”
ফল কেমন হবে? তা নিয়ে অবশ্য তৃণমূল ছাড়া আর কোনও দলেরই চড়া সুর শোনা যায়নি। প্রত্যেকেরই অপেক্ষা ১৬ মে-র দিকেই।