কার্যালয় খোলার পর। ছবি: কিংশুক আইচ।
অবশেষে খুলল সিপিএমের এনায়েতপুরের কার্যালয়।
বুধবার দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল করে গিয়ে কার্যালয়টি খোলেন। রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল কার্যালয়টি। জঙ্গলমহলের অশান্তি-পর্বে এই এনায়েতপুর কার্যালয়েই আক্রমণ করেছিল মাওবাদীদের একটি দল। সেই সময় মাওবাদীদের সঙ্গে সিপিএমের বাহিনীর গুলি বিনিময় হয় বলেও অভিযোগ। শেষমেশ পিছু হটে মাওবাদীরা। সিপিএম অবশ্য গুলি চালনার কথা মানতে চায়নি। দলীয় নেতৃত্বের দাবি ছিল, গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েই পিছু হটে মাওবাদীরা।
মেদিনীপুর সদর ব্লকের এনায়েতপুরে রয়েছে সিপিএমের মণিদহ লোকাল কমিটির কার্যালয়। দোতলা বাড়ি। পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে মেদিনীপুর-ধেড়ুয়া সড়ক। পুলিশের অনুমতি নিয়ে বুধবার সকালে মণিদহ থেকে মিছিল শুরু করেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। মণিদহ থেকে এনায়েতপুরের দূরত্ব এক কিলোমিটার। ছিলেন মেদিনীপুরের সিপিআই প্রার্থী প্রবোধ পণ্ডা। পাশাপাশি ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সত্যেন মাইতি, সদর পশ্চিম জোনাল সম্পাদক দেবাশিস দত্ত, প্রাক্তন যুব নেতা সুদীপ্ত সরকার, ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক দিলীপ সাউ প্রমুখ।
এনায়েতপুরে মিছিল পৌঁছনোর পরই লোকাল কমিটির কার্যালয়ের দরজা খোলা হয়। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তখন উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। কয়েক জন অত্যুৎসাহী কর্মী কার্যালয়ের ছাদে গিয়ে লাল ঝাণ্ডা ওড়াতে শুরু করেন। লালগড় পেরিয়ে এক সময় মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রভাব বাড়ায় মাওবাদীরা। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে মণিদহ লোকাল কমিটির কার্যালয়ে আক্রমণ চালানো হয়। সেই সময় তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ ছিল, এখানে সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন থাকে। এই সব লোকজনই গ্রামের মানুষের উপর অত্যাচার করে। যারা থাকে, তাদের অনেকেই ভাড়াটে। সেই সময় এই কার্যালয়কে তিন দিক থেকে ঘিরে গুলি চালায় মাওবাদীরা। পাল্টা জবাব আসে কার্যালয়ের মধ্যে থেকেও। দীর্ঘক্ষণ ধরে গুলির লড়াই চলে। পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়ায়। শেষমেশ গুলি-যুদ্ধে হেরে পিছু হটে মাওবাদীরা।
এনায়েতপুরের এই ‘সাফল্য’ থেকে শিক্ষা নিয়ে জঙ্গলমহলে ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ শুরু করে সিপিএম। বিভিন্ন এলাকায় এ ভাবে ‘গণ-প্রতিরোধ’ শুরু হয়। বস্তুত, গুলির লড়াই চলাকালীন মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেণজী সংবাদমাধ্যমে ফোন করে সিপিএম কর্মীদের ‘লাশের পাহাড়’ দেখে যাওয়ারও ডাক দিয়েছিলেন। যদিও পর দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনও লাশ মেলেনি। পরের বছর অর্থাৎ, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে এই ‘প্রতিরোধের বর্ষপূর্তি’ও পালন করে সিপিএম। সভা হয়। সেখানে উপস্থিত থেকে দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার লালগড়কে মাওবাদীদের হাত থেকে ‘মুক্ত’ করার ডাক দেন।
রাজ্যে পালাবদলের পরপরই সিপিএমের এই কার্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। মেদিনীপুর পশ্চিম জোন এলাকায় দল রাজনৈতিক ভাবে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। অনেক নেতা-কর্মী মামলায় জড়িয়ে পড়েন। ফলে, সংগঠনে ধস নামে। পালাবদলের পর পর এনায়েতপুরের আশপাশ থেকে প্রচুর অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রও উদ্ধার হয়। এনায়েতপুরের কিছু দূরে রয়েছে কনকাবতী।
এখান থেকেও প্রচুর অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়।
লোকসভা ভোট ঘোষণা হওয়ার পর সিপিএম বিভিন্ন এলাকাতেই বন্ধ থাকা কার্যালয় খুলছে। সাংগঠনিক কাজকর্ম শুরু করছে। সেই মতো এ দিন মণিদহ লোকাল কমিটির কার্যালয়টি খোলা হয়। পরে মিছিল করে গিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকেরা কনকাবতী লোকাল কমিটির কার্যালয়টিও খোলেন। ধামসা-মাদল নিয়ে আশপাশের এলাকাতেও মিছিল হয়। পুলিশ মোতায়েন ছিল। ফলে, অনভিপ্রেত কোনও ঘটনা ঘটেনি।