প্রাক্তন জেলা সভাপতিপতি সিপিএমের অন্তরা ভট্টাচার্য।—ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে সাফল্যের পরে শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপি। আগামী রবিবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ পশ্চিম মেদিনীপুরে আসছেন। ওই দিন বিভিন্ন দল ছেড়ে কয়েকশো নেতা-কর্মী-সমর্থকের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা। তার মধ্যে সম্ভাব্য নাম হিসেবে কয়েকজন বাম নেতার কথা উঠে এসেছে। এর মধ্যে আছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের পদত্যাগী জেলা ভাপতি সুকুমার ভুঁইয়া, এআইটিইউসি-র জেলা কমিটির সদস্য অশোক সেনাপতি। এ বার আরও একটি নাম নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি হলেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের অন্তরা ভট্টাচার্য।
অন্তরাদেবীর বিজেপিতে যোগ নিয়ে জল্পনা অন্য মাত্রা পেয়েছে বৃহস্পতিবার। এ দিন মেদিনীপুরে বিজেপির জেলা কমিটির বৈঠক ছিল। বৈঠকে দলের বিভিন্ন ব্লক এবং শহর সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী রবিবার কর্মসূচি সফল করা নিয়েই আলোচনা হয়। ব্লক-শহরের কারা কারা অন্য দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন, আলোচনায় তা-ও উঠে আসে। দলের এক সূত্রে খবর, জেলা কমিটির বৈঠকের ফাঁকেই কয়েকজন নেতা বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, প্রাক্তন সভাধিপতিও কি দলবদল করতে চলেছেন। তুষারবাবু জানান, ‘এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’ বিজেপি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এ দিন বৈঠক চলাকালীন তুষারবাবু দলের পিংলা ব্লক সভাপতি অমল তড়ালের কাছে জানতে চান, অন্তরাদেবী দলে এলে তাঁর আপত্তি আছে কি না। অমলবাবু বলেন, আপত্তি নেই। প্রাক্তন সভাধিপতি এলে বরং সংগঠনেরই ভাল হবে।
জানা গিয়েছে, বুধবার বিজেপির জেলা সভাপতির সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছে অন্তরাদেবীর। যদিও প্রকাশ্যে দু’জনই গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছেন। অন্তরাদেবী কি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন? সদুত্তর এড়িয়ে বৃহস্পতিবার বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবু বলেন, “প্রাক্তন সভাধিপতির সঙ্গে কি ফোনে কথা হতে পারে না? অনেকেই দলে আসতে চেয়ে আবেদন করছেন। আগামী রবিবার দলের রাজ্য সভাপতি জেলায় আসছেন। ওই দিন অনেকে বিজেপিতে যোগ দেবেন। এখনই এর বেশি কিছু বলছি না।”
দলত্যাগের বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তার কথা মেনে নিয়েছেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি অন্তরাদেবীও। এ দিন তিনি বলেন, “তৃণমূলের জোরজুলুম চলছে। দলের অনেক কর্মীই আমাকে দলবদলের পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, আগামী দিনে বিজেপিই তৃণমূলের প্রধান বিরোধী শক্তি হবে। আমি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি।” অন্তরাদেবী কি দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন? সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের জবাব, “এখন অনেক রকম গুজবই চলছে!”
ইতিমধ্যে পিংলার জামনা পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্যা সালমা বিবি বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। প্রাক্তন সভাধিপতির বাড়ি পিংলার ধনেশ্বরপুর পঞ্চায়েতের রঘুনাথচকে। কেন দলবদলের ভাবনাচিন্তা শুরু করলেন অন্তরাদেবী? সূত্রের খবর, জেলা পরিষদে পালাবদল হওয়ার পর থেকে দলের জেলা নেতারা তাঁর সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখেননি। এ নিয়ে ঘনিষ্ঠদের কাছে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন সভাধিপতি। ঘনিষ্ঠদের কাছে তিনি এও অনুযোগ করেছেন, “আমি কেমন আছি, কী ভাবে আছি, জেলা নেতারা কি মাঝেমধ্যে তার খোঁজখবর নিতে পারতেন না?”
২০০৮-’১৩ পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন অন্তরাদেবী। তার আগে ১৯৯৮-২০০৮ পর্যন্ত টানা দশ বছর তিনি পিংলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। জেলা সিপিএম নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, প্রাক্তন সভাধিপতির সঙ্গে দলের সম্পর্ক এখনও শুকিয়ে যায়নি। এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও রয়েছে। এ বার লোকসভা নির্বাচনে নিজের বুথে বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণার পোলিং এজেন্টও ছিলেন অন্তরাদেবী।
আগামী রবিবার জেলায় একাধিক সভা করার কথা বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের। ওই দিন যাঁরা বিজেপিতে যোগ দেবেন, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি শুরু হয়েছে গেরুয়া-শিবিরে। শেষমেশ যদি প্রাক্তন সিপিএম সভাধিপতিও দলবদলের দলে থাকেন, তাহলে সেটাই যে সব থেকে ভারী নাম হবে, এ নিয়ে একমত জেলার রাজনৈতিক মহল।