আতঙ্কের মুখ। মেদিনীপুরে রবিবারের ঘটনার পর। কিংশুক আইচ।
ফের বাড়ির মধ্যে রক্তাক্ত দেহ। ফের রহস্য। ঘটনাস্থলও মেদিনীপুরের সেই এক পাড়া।
রবিবার দুপুরে এক যুবতীর বাড়িতে ঢুকে বোলপুরের যুবক চৌধুরী হাসানুজ আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনার পরে এলাকাবাসীর মুখে মুখে ফিরছে বছর পাঁচেক আগের সেই ঘটনার কথা। এ দিনের ঘটনাস্থল থেকে অদূরেই সেই বাড়ি, পাঁচ বছর আগে যেখানে খুন হয়েছিল এক কিশোর। ২০১২-র সেই ঘটনার কিনারা এখনও হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস সেনের কথায়, “ছেলেটা বাড়ির মধ্যে খুন হয়ে গেল। এতদিনেও পুলিশ তার কিনারা করতে পারল না।” এলাকার কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তীও বলছিলেন, “এ দিন বোলপুরের যুবকের আত্মহত্যা ওই কিশোর খুনের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে।”
২০১২ সালের ১১ মে নিজের ঘরের বিছানাতেই পাওয়া গিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অভিষেক নাগের রক্তাক্ত দেহ। দু’হাতের শিরা ছিল কাটা। আর বিছানা জুড়ে চাপ চাপ রক্ত। এ দিন ওই যুবতীর বাড়ির মধ্যে কুয়োর পাড়ে যেখানে হাসানুজ আত্মহত্যা করেন, সেখানেও চারদিক রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। অভিষেক খুনের কিনারা কেন এখন হল না? পুলিশের বক্তব্য, সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিছু তথ্যপ্রমাণ হাতে পেলেই তাকে গ্রেফতার করা যায়। এ ক্ষেত্রে তা মেলেনি। এখনও তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। নিহত ছাত্রের পরিবার এখনও বিচারের আশায় রয়েছে। সুবিচারের আশায় পরিজনেরা সিআইডি থেকে মানবাধিকার কমিশন, নানা মহলে দরবার করেছেন। তবে আশ্বাস মেলা ছাড়া লাভ কিছু হয়নি ।
হাসানুজের ব্যাগে তল্লাশি।
অভিষেকের পাড়াতেই রবিবার ফের রক্তারক্তি কাণ্ড। প্রথমে যুবতীর বাড়িতে ঢুকে তাঁর দিকে পিস্তল তাক করেন হাসানুজ। যুবতী কোনওরকমে বাথরুমে ঢুকে প্রাণে বাঁচেন। তারপর ওই পিস্তুল থেকে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হন বোলপুরের ওই যুবক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবক-যুবতীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সম্পর্কে চিড় ধরে। সম্ভবত সেই প্রত্যাখ্যান থেকে হাসানুজ এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে তদন্তকারীদের অনুমান। গোটা বিষয়টি জানতে যুবতীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
ওই যুবতীর বাড়ির অদূরেই থাকেন এলাকার কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এ দিন সবে বাড়ি ঢুকেছি। হঠাৎ দলের এক কর্মী জানালেন, পাড়ায় গুলি চলেছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটলাম। পুলিশে খবর দিলাম।” নির্মাল্যর কথায়, “ওই যুবককে এই পাড়ায় আগে কখনও দেখিনি। শুনেছি, ও না কি শনিবারও এখানে এসেছিল। পুলিশ সব খতিয়ে দেখছে।’’
রবিবার সকালে মেদিনীপুর শহরের ওই এলাকাতেই আত্মঘাতী হয়েছেন এক বৃদ্ধ। মানসিক অবসাদে এই আত্মহত্যা বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। সব দেখে-শুনে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছিলেন, “আমাদের পাড়ায় একের পর এক অঘটন ঘটেই চলেছে!” (নিজস্ব চিত্র।)