প্রতীকী ছবি।
প্রকাশ্যে মদ্যপানের প্রতিবাদ করেছিলেন ওঁরা। সেই আক্রোশে মদের কারবারিদের হাতে ‘আক্রান্ত’ হলেন প্রমীলা বাহিনীর সদস্যরা। রেহাই পাননি প্রতিবাদী ওই মহিলাদের পরিজনেরাও। কোলাঘাটের পূর্ব দাসপাড়া এলাকায় মোট দশ জন প্রতিবাদী মহিলা প্রহৃত হয়েছেন বলে পুলিশে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। কোলাঘাট বিট হাউস থানার এক আধিকারিক জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
কোলাঘাট বাজারের পিছনে বাড়বড়িশা গ্রামের পূর্ব দাসপাড়ায় প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে চলছিল মাদকের কারবার। পাড়ার ১৩৯টি পরিবারের মধ্যে ৬০ শতাংশই এই কারবারে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ। নেশার টানে ভিড় জমাত বহিরাগতেরা। প্রকাশ্য দিবালোকে মাদকের কারবার চললেও বড়সড় পুলিশি অভিযান হয়নি বলে অভিযোগ। মাদকের কারবারে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বুঝে রুখে দাঁড়ান এলাকার মহিলারা। মাস খানেক আগে এলাকার প্রায় দু’শো মহিলা একত্রিত হয়ে গড়ে তোলেন মাদক বিরোধী একটি সমিতি। তাঁরা পুলিশের সহযোগিতায় পাড়ায় মাদক বিরোধী অভিযানে নামেন।
কিছুদিন আগে ওই অভিযানেই এলাকার এক হেরোইন কারবারিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রমীলা বাহিনী এলাকায় টহলও দিচ্ছিল। ‘মাদক বিক্রি নিষিদ্ধ’ মর্মে পাড়ায় ফ্লেক্সও ঝুলিয়েছিল। বুধবার রাত ১১টা নাগাদ এলাকায় মদ্যপানের অভিযোগ পেয়ে সেখানে যান প্রমীলা বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে তখন পাঁচ বহিরাগত যুবক প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিল বলে অভিযোগ। প্রমীলা বাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে ওই যুবকেরা চলে যায়। কিন্তু পরে এক মাদক কারবারি দলবল নিয়ে প্রমীলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের উপর রড-লাঠি নিয়ে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। চলে মারধর। দশ জন মহিলা আহত হন। আহত হয়েছে এক মহিলার স্কুল পড়ুয়া ছেলেও। আহতদের রাতেই স্থানীয় পাইকপাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার গুরুতর আহত এক মহিলাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তমলুক জেলা হাসপাতালে।
আক্রান্ত পূর্ণিমা দাস বলেন, ‘‘ওরা প্রকাশ্যে মদ খাচ্ছিল। আমরা বাধা দিলে পরে হামলা চালায়। পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ প্রমীলা বাহিনীর অধিকাংশ মহিলাই পরিচারিকার কাজ করেন। ঘটনার প্রতিবাদে তাই সরব হয়েছে সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাখা। সংগঠনের নেত্রী অঞ্জলি মান্না ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন কোলাঘাট বিট হাউস থানায় স্মারকলিপি দেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মদ ও মাদক দ্রব্য বিরোধী কমিটির পক্ষ থেকেও এ দিন আবগারি দফতরে বিষয়টি জানিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপের আর্জি জানানো হয়।