মহিলা কামরায় অবাধে পুরুষ যাত্রীদের সফর। খড়্গপুর-ভদ্রক প্যাসেঞ্জারে। নিজস্ব চিত্র।
করোনা আবহে চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন। অথচ দূরত্ব বিধি মানার বালাই নেই। সঙ্গে দেখা দিয়েছে নিরাপত্তার অভাব। প্যাসেঞ্জার ট্রেনে অসুরক্ষিত মহিলারা। ট্রেনের মহিলা কামরায় অবাধে সফর করছেন পুরুষরা! দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনে দেখা যাচ্ছে এমনই ছবি।
অভিযোগ, নিয়মিত খড়্গপুর-ভদ্রক প্যাসেঞ্জারের মহিলা কামরায় যাতায়াত করছেন পুরুষ যাত্রীরা। এমনকি, মহিলা কামরায় পুরুষরা আসন দখল করে থাকায় মহিলা যাত্রীদের ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ঘটনার প্রতিবাদ করলে পুরুষ যাত্রীদের চোখরাঙানি ও কটূক্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে মহিলা যাত্রীরা দাবি করছেন। রেলের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ।
করোনার পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ৬মাস বন্ধ থাকার পরে ৩১ অক্টোবর থেকে চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন। এর পরেই চালু হয় ভদ্রক শাখায় লোকাল ট্রেন চলাচল। তবে ট্রেন চালু হলেও করোনা বিধি পালনে কোনও নজরদারি দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরায় দেখা যাচ্ছে না আরপিএফ। গত ৬ নভেম্বর সকালে মেদিনীপুর-হাওড়া লোকালে মহিলা কামরায় উঠে মহিলাদের শ্লীলতাহানি ও অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে এক যুবক। মহিলারা চিৎকার করলেও আরপিএফের দেখা মেলেনি। শেষমেশ ট্রেন টিকিয়াপাড়ায় পৌঁছলে পাশের কামরার যাত্রীরা এসে ওই যুবককে ট্রেন থেকে নামিয়ে আরপিএফের হাতে তুলে দেন। তবে পরিস্থিতির বদল হয়নি। আর খড়্গপুর-ভদ্রক শাখায় রেলের বিধির তোয়াক্কা না করে অবাধে মহিলা কামরায় যাতায়াত করছেন পুরুষরা।
মহিলাদের অভিযোগ, খড়্গপুর স্টেশন থেকেই মহিলা কামরায় পুরুষ দেখা যাচ্ছে। এর পরে হিজলি, বেলদায় মহিলা কামরা কার্যত পুরুষ যাত্রীদের দখলে চলে যাচ্ছে। আসন পাচ্ছেন না মহিলা যাত্রীরাই। গত ২৩ নভেম্বরও খড়্গপুর থেকে বালেশ্বর যাওয়া কয়েকজন মহিলা রেলকর্মীও এই ঘটনার শিকার হয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদ করলে পুরুষ যাত্রীরা পাল্টা চড়াও হয়েছে। গোটা ঘটনাটি ওই মহিলারা সমাজমাধ্যমে দিলেও প্রতিকার মেলেনি বলে দাবি। প্রতিবাদী ওই মহিলাদের মধ্যে খড়্গপুরের ইন্দার বাসিন্দা মৌমিতা বসু বলেন, “এই ভদ্রক শাখায় নিয়মিত মহিলা কামরার আসন পুরুষরা দখল করে বসে থাকে। যাঁরা নিয়মিত ওই শাখায় যাতায়াত করেন এটা তাঁরা বলছেন। তবে আমরা ওই দিন বালেশ্বর যাওয়ার পথে একই ঘটনা ঘটে। আমি প্রতিবাদ করলে আমাদের দিকে উল্টে তেড়ে এসেছে পুরুষ যাত্রীরা। আমরা রেলের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলেও কেউ ধরেনি।” একই ঘটনার কথা বলছেন ওই শাখার নিয়মিত যাত্রী ঝাপেটাপুরের রিমি দত্ত। তিনি বলেন, “আমি কর্মসূত্রে বালেশ্বরে থাকি। বাড়ি থেকে ফেরার সময় খড়্গপুর থেকে ভোরে ৫টা ২৫ মিনিটে ভদ্রক প্যাসেঞ্জারে যাই। এখন শীতকালে ভোরে এভাবে মহিলা কামরায় পুরুষ যাত্রীরা সফর করায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। কিন্তু মুখ বুজে যেতে হয়।”
রেলের সিনিয়ার ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার রাজেশ কুমার বলেন, “এমন ঘটনার উপর আমরাও নজর রাখছি। মহিলা কামরায় পুরুষ যাত্রী ঠেকাতে অভিযান চালাব।”