প্রমীলা-দাপটে নেশা কেটেছে গোপমহলের

চোলাই সংসারে শান্তি নষ্ট করছিল। তাই চোলাইয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল ঘাটালের গোপমহলের মহিলারা। লড়াইয়ের ফলও মিলেছে হাতেনাতে। গোপমহলে নিষিদ্ধ হয়েছে চোলাই বিক্রি।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৩
Share:

মিছিল মহিলাদের। নিজস্ব চিত্র

চোলাই সংসারে শান্তি নষ্ট করছিল। তাই চোলাইয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল ঘাটালের গোপমহলের মহিলারা। লড়াইয়ের ফলও মিলেছে হাতেনাতে। গোপমহলে নিষিদ্ধ হয়েছে চোলাই বিক্রি। সংসারে ফিরেছে শান্তি। স্বস্তিতে গ্রামবাসীরা। এ বার চোলাইয়ের এই মারণ নেশা থেকে শুধু গ্রাম নয়, পড়শি গ্রামেও আন্দোলন শুরু করল বাহিনী।

Advertisement

সোমবার বিকালে দুর্গা মালিক, করুণা মালিকদের নেতৃত্বে মিছিল যায় গোপমহল, মনোহরপুর হয়ে খাঞ্জাপুর হাইস্কুল পর্যন্ত। তবে এ দিনের মিছিলে শুধু মহিলাই নন, ছিলেন স্থানীয় আশাকর্মী থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য ,পঞ্চায়েত সদস্যরাও। যাঁরা গোপমহলে মদ বিক্রি করতেন তাঁদেরও অনেকে মিছিলে সামিল হন।

ক’মাস আগেও দুর্গা মালিক, অঞ্জলি মণ্ডরা মদ বেচে সংসার চালাতেন। গোপমহলে এখন তাঁরাই আন্দোলনের মুখ। তাঁরা এখন মাছ-সব্জি বেচে বা কেউ ধূপ তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন। অঞ্জলিদেবী এ দিন বলেন, “সচেতনতার অভাবেই আমরা ওই পথ বেছে নিয়েছিলাম। সারাদিন কষ্ট করে মদ বেচে কোনও ক্রমে সংসারটা চলত। লাভের বড় অংশ তো আমাদের ট্যাঁকে ঢুকত না। অন্যের পেট ভরিয়ে লাভ কি?’’ এ দিন প্রমীলা বাহিনীর সদস্যরা বলছিলেন, “এ জন্য প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা শুরু হলেই আমাদের আন্দোলনও সফল হবে।” গোপমহল, খাঞ্জাপুরের রথতলা, মনোহরপুর বাজার সহ সংলগ্ন আট-দশটি এলাকায় এখন পুরোপুরি মদ বেচা বন্ধ।

Advertisement

ঠিক বছর খানেক আগে এমনই আন্দোলন শুরু করেছিলেন দাসপুরের দুধকোমরা এলাকার মহিলারা। সেখানকার আন্দোলন এতটাই তীব্র ছিল যে, ঠেক বন্ধ করে গ্রাম ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে যেতে হয়েছিল কারবারিদের। কিন্তু আচমকাই লড়াইয়ে দাঁড়ি টেনে কাযর্ত ‘ঘরবন্দি’ হতে হয়েছিল বাহিনীর সদস্যদের। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে চোলাই কারবারিদের হুমকি, শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বদের লালচোখ আর প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ। একই মহকুমার গোপমহলের চিত্রটা কিন্তু পুরোপরি অন্য। স্থানীয় তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে পাশে পেয়েছেন দুর্গা মালিকরা। আন্দোলন চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছে ঘাটাল থানার পুলিশও। খোদ মহকুমাশাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধানেরও কড়া নজরদারি রয়েছে। হেসে এ সব জানালেন এক গৃহবধূই। আন্দোলনকে সমর্থন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। গ্রামবাসীর বক্তব্য, “আগে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে আবগারির লোকজন এসে অভিযান চালিয়ে চলে যেত। ক’দিন পরই বিষয়টি থিতিয়ে গেলে শুরু হয়ে যেত বেআইনি কারবার। বাহিনীর আন্দোলনের জেরে দ্রুত গ্রামে এরকম ভোল বদল হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি!”

বিকল্প রোজগার প্রসঙ্গে ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বললেন, “ইতিমধ্যে প্রতি পঞ্চায়েতেই আমরা বৈঠক করছি। আগে আমরা চোলাই কারবারিদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছি। তারপর সরকারি ভাবে সাধ্যমতো বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে।”

দুধকোমরার পরিস্থিতি শুনে প্রমীলা বাহিনীর সদস্যদরা বলে উঠলেন, “এলাকায় চোলাই বিক্রি হলে সংসারে কী হাল হয়, ভুক্তভোগীরা জানেন। আমরা দুধকোমরা গ্রামেও যাব, যাতে ওখানেও আন্দোলন শুরু হয়।” বাহিনীর এক সদস্য বললেন, “লাল চোখে ভয় পাওয়ারই কথা। কিন্তু একবার পাল্টা চোখ দেখালেই সবাই পালাবে। এই ‘ওষুধ’ দুধকোমরায় গিয়ে জানিয়ে আসব।”

চোলাইয়ের নেশা কেটেছে গোপমহলের। পড়শি গ্রামের নেশা ছাড়াতেই হবে- এক কাট্টা প্রমীলা বাহিনী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement