পাতা হয়েছে ফাঁদ। নিজস্ব চিত্র
গৃহস্থের গোয়ালে হানা দিয়ে পাঁচ-পাঁচটি ভেড়াকে মেরেছে হামলাকারী কোনও প্রাণীর দল। শুক্রবার গভীর রাতে ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের ডাহি গ্রামের ওই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। বন দফতরের অনুমান, হায়নার দলই হানা দিয়েছিল। আর লোকালয়ে তাদের হামলার কারণ হিসেবে উঠে আসছে জঙ্গলে খাদ্য সঙ্কটের কারণ।
যেখানে পাঁচটি ভেড়ার দেহ মিলেছে, সেখানে নরম কাদা-মাটিতে পায়ের ছাপ দেখে বনকর্মীদের প্রাথমিক ধারণা ছিল, নেকড়ে অথবা হায়নার দল হানা দিয়েছিল। পায়ের ছাপ বিশ্লেষণ করে পরে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, ডাহি গ্রামে হায়নার দলই এসেছিল। পরিস্থিতি দেখতে রবিবার রাতে খাঁচায় জ্যান্ত ভেড়া রেখে ডাহি গ্রামে ফাঁদ পাতা হয়েছিল। তবে কিছুই ধরা পড়েনি।
বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে বন্যপ্রাণীদের উপযুক্ত খাবার-দাবার একেবারেই নেই। জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটাতেই এই পরিস্থিতি। ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে কয়েক শতাব্দী আগে থেকেই হাতি, হায়না, নেকড়ে ভালুক, ভাম, বাঘরোলের মতো বন্যপ্রাণীর আনাগোনা ছিল। তখন জঙ্গল গভীর থাকায় ও খাদ্যশৃঙ্খলের সুষ্ঠু ভারসাম্য থাকায় বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে সে ভাবে আসত না। কর্মসূত্রে দীর্ঘ দিন ঝাড়গ্রামে কাটিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সহকারী বনাধিকারিক সমীর মজুমদার। তিনি জানাচ্ছেন, আগে বন্যপ্রাণীরা কালেভদ্রে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে খাবারের জন্য হানা দিত। এখন নানা কারণে জঙ্গলে বন্যপ্রাণীদের খাবারে টান পড়ছে। তাই খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হানার ঘটনা এখন হামেশাই ঘটছে।
ডাহি গ্রাম জঙ্গল থেকে অনেকটাই দূরে। তাও কেন এমন পরিস্থিতি? বন ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। তাছাড়া ঝাড়গ্রাম জেলা হওয়ার পরে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য জঙ্গলের পরিধি সঙ্কুচিত হচ্ছে। সরকারি অফিস-কাছারি তৈরিতে বনভূমিতেও হাত পড়ছে। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে তৈরি হয়েছে পাকা রাস্তা। সব মিলিয়ে বন্যপ্রাণীদের নিশ্চিন্তে বসবাসের জায়গাটা সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। তার উপর শিকার উৎসবের নামে বনশুয়োর, হরিণ, জংলি খরগোস, নেউল, গন্ধগোকুল, বনবিড়াল, খেঁকশিয়াল, শিয়ালের মতো বন্যপ্রাণী যথেচ্ছ হত্যা চলছে। ফলে জঙ্গলের খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাতির দলও খাবারের খোঁজে হামেশাই জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে হানা দিচ্ছে।
সমীরের মতে, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান কার্যত অসম্ভব। কারণ, জঙ্গলকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়াটা রীতিমতো কঠিন কাজ, দীর্ঘমেয়াদীও। সব মহলের সচেতনতা ও সহযোগিতা ছাড়া এটা করা সম্ভবও নয়। জেলার এক বনকর্তার অবশ্য আশ্বাস, ‘‘এই সমস্যা মেটাতে সবুজায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। শিকার উৎসবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।’’