প্রত্যাশামতো তমলুক পুরসভায় তৃণমূলের বিপুল জয় এসেছে। কিন্তু বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন তমলুক পুরসভার প্রথম মহিলা পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি। পুরসভায় তৃণমূলের এককভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে জিতে আসা দলের কয়েকজন কাউন্সিলর থাকায় নতুন পুরপ্রধান কে হবেন তা নিয়ে জল্পনা চলছে তমলুক শহরের রাজনৈতিক মহলে।
পুরসভা নির্বাচনে এ বার নিয়ে মোট আটবার জিতলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন। প্রথমে কংগ্রেস ও পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে জেতা রবীন্দ্রনাথবাবু ১৯৯১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টানা পুরপ্রধান হিসেবে ছিলেন। পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়ে জেতা প্রবীণ রবীন্দ্রনাথবাবু এ বার নতুন পুরপ্রধান পদের অন্যতম দাবিদার বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে। একইভাবে পুরপ্রধানের দাবিদার রয়েছেন আর এক প্রাক্তন পুরপ্রধান পৃথ্বীশ নন্দী। এ বার নিয়ে চতুর্থবার জিতেছেন পৃথ্বীশবাবু। গতবার পুরসভা নির্বাচনে মোট কাউন্সিলরের অর্ধেকের বেশি কাউন্সিলর মহিলা হওয়ায় পুরপ্রধানের পদ মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যায়। ফলে জেতা সত্বেও পুরপ্রধানের পদে ফিরতে পারেননি আগের বোর্ডের পুরপ্রধান পৃথ্বীশবাবু। এ বার ফের তাকে পুরপ্রধান পদে আনা হয় কি না তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে।
বিদায়ী পুরবোর্ডের উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ও এ বার নতুন পুরপ্রধান পদের অন্যতম দাবিদার হিসেবে রয়েছেন। দীপেন্দ্রনারায়ণবাবুও চতুর্থ বার জয়ী হয়েছেন। ফলে পুরপ্রধানের পদের দৌড়ে তাঁর নাম রয়েছে। তবে তমলুকের নতুন পুরপ্রধান কে হবেন তা নিয়ে তৃণমূলের তরফে এখনও দলীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু তমলুকের নতুন পুরপ্রধান পদে এই তিনজন অভিজ্ঞ কাউন্সিলরের নাম শহরের রাজনৈতিক মহলে আলোচনায় উঠে এসেছে। এ ছাড়াও নতুন পুরপ্রধান পদের দাবিদার হিসেবে রয়েছেন পাঁচ বারের জেতা কাউন্সিলর চন্দন প্রধানও।
তৃণমূলের দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতির হারের জেরে তমলুকের নতুন পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে এ বার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব সতর্কভাবে এগোতে চাইছে। তমলুক পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলর হিসেবে কয়েকজন অভিজ্ঞ রাজনীতিকের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন নতুন মুখ জিতে এসেছেন। ফলে পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধান পদে প্রবীণ-নবীন মিলিয়ে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হতে পারে এমন জল্পনা রয়েছে। পুরসভায় নির্বাচিত দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার পরেই এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
নতুন পুরপ্রধান হবেন তা নিয়ে অবশ্য কোন মন্তব্য করতে চাননি রবীন্দ্রনাথ, দীপেন্দ্রনারায়ণ ও পৃথ্বীশবাবু। তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘তমলুকের নতুন পুরপ্রধান কে হবেন তা যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। এ নিয়ে এখনই সংবাদমাধ্যমে কিছু মন্তব্য করব না।’’
একই ছবি এগরাতেও। শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির কাছে প্রাক্তন পুরপ্রধান স্বপন নায়ক ও চার নম্বর ওয়ার্ডে নির্দলের কাছে প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান বীরেন নায়ক পরাজিত হয়েছেন। তাই নতুন পুরপ্রধানের তালিকা থেকে তাঁরা শত যোজন দূরে। তৃণমূলের দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন পুরপ্রধান হিসেবে এগরার দু’বারের প্রাক্তন পুরপ্রধান তপনকান্তি কর ও এগরা ১ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী নতুন প্রার্থী পারুল মাইতির নাম উঠে আসছে। আবার আট নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সালেহা বিবি এ বার পুরভোটে সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছেন। ফলে তাঁকে পুরপ্রধানের দৌড়ে রাখতেই হচ্ছে।
এগরার তৃণমূলের আহ্বায়ক বিধায়ক সমরেশ দাসের কথায়, ‘‘এগরা পুরসভা আমাদের হাতে তুলে দেবার জন্য এগরাবাসীকে ধন্যবাদ। তবে এখনো দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পুরপ্রধান হিসেবে কারোর নাম জানাননি। আলোচনার মাধ্যমে শুভেন্দুবাবু ও শিশিরবাবুই এগরার পুরপ্রধানের নাম ঠিক করবেন।’’